লংগদু হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রকৃত সংখ্যা ৩০৪

0

লংগদু (রাঙামাটি) : গত ০২ জুন রাঙামাটির লংগদু উপজেলার তিন পাহাড়ি গ্রামে হামলা-লুটপাট ও অগ্নিংযোগে সর্বমোট ৩০৪ টি পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ২২০/২২৪ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য ত্রাণ দিতে গেছেন বা যাচ্ছেন তারা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

গতকাল রবিবার (২৫ জুন, ২০১৭) ইউপিডিএফ, জনসংহতি সমিতি(এম এন লারমা), ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ লংগদুর ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে ও ত্রাণ দিতে যান। এ সময় লংগদু ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি’র আহ্বায়ক তিনটিলা গ্রামের কার্বারী অশ্বিনী কুমার চাকমা ও জনসংহতি সমিতি(সন্তু লারমা)’র লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা উক্ত টিমকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখপূর্বক উক্ত সংখ্যার কথা উল্লেখ করেন।Longudu settlers attack1

মনিশংকর চাকমা বলেন, যাদের পুরো ঘর পুড়ে গেছে তাদের সংখ্যা হলো ২১৮ পরিবার। এদের মধ্যে তিনটিলা গ্রামে ১১৪ পরিবার, মানিকজোড় গ্রামে ৮০ পরিবার ও বাত্যাপাড়ায় ২৪ পরিবার রয়েছেন। এছাড়াও এই তিন গ্রামের অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাড়াহুড়োর কারণে দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্নজনের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে সক্ষম না হলেও অনেকের বাড়িঘর থেকে জিনিসপত্র লুটপাট করা হয় এবং অনেকের আংশিকভাবে ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে যায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইসকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা হলো সর্বমোট ৮৬ টি। তারমধ্যে মধ্যে তিনটিলা গ্রামে রয়েছে ৪২ টি পরিবার, মানিকজোড় গ্রামে রয়েছে ২১ টি পরিবার ও বাত্যাপাড়ায় রয়েছে ২৩ টি পরিবার।

এছাড়া এই সময় সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন লংগদু ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক অশ্বিনী কুমার চাকমা, মিইনী ডোর মৌজার হেডম্যান ও লংগদু ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি’র সদস্য সচিব মানিক কুমার চাকমা, লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা, ১ নং আদরকছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঙ্গলকুমার চাকমা, প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা, জনসংহতি সমিতি(এম এন লারমা)’র কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য নরেশ চাকমা, সুনীলময় চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা ও জনসংহতি সমিতি’র লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা প্রমুখ।Longudu settlers attack2

আলোচনা সভায় সকল বক্তাগণ জাতীয় দুর্দিনে সকল ভেদাভেদ-অহংকার-ভুলবোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শাসকগোষ্ঠীর জুম্ম ধ্বংসের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা লংগদুর ক্ষতিগ্রস্ত জনগণসহ লংগদুবাসীকে শংকা-ভয়ভীতির মধ্যে না থেকে বর্তমান সমস্যাকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লংগদুতে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ-ক্ষয়ক্ষতির শিকার জনগণের পাশে ইউপিডিএফসহ পার্বত্য জনগণ ও দেশবিদেশের সচেতন জনগণ রয়েছেন।

প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বাংলাদেশ সরকারের  কাছে লংগদু ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির প্রদত্ত ১০ দফা দাবিনামা অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লংগদুর জনগণ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু। ১৯৮৯ সালে তারা একবার উদ্বাস্তু হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ জুন তাদেরকে আরেকবার উদ্বাস্তু হতে হলো। সুতরাং, তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বিষয়ক কমিটি বা বিভাগের মাধ্যমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।Longudu settlers attack3

জনসংহতি সমিতি(এম এন লারমা)’র কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার চাকমা আলোচনা সভা থেকে লংগদু হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি দিতে আহ্বান জানান এবং কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে এম এন লারমা ধারার জনসংহতি সমিতি সর্বশক্তি দিয়ে সহায়তা প্রদান করবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

জনসংহতি সমিতি(সন্তু লারমা)’র লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক উক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা থেকে লংগদুবাসীর পক্ষ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিত্য ও নিয়মিতভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে যারা আসছেন তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন। 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More