সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি ইউপিডিএফের
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: দেশের সকল জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
নির্বাচনোত্তর সারাদেশে জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ, ঘরবাড়ি, মন্দিরে হামলা-লুটপাট-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরকারের নির্লিপ্ততার প্রতিবাদে আজ ১৯ জানুয়ারী রবিবার খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ইউপিডিএফ’র নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের স্বনির্ভরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে রবিবার সকাল ১১ টায় একটি বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া, উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ যোগদান করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নেতা দেবদন্ত ত্রিপুরা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সদস্য অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা। সভা পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সকল নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বর্তমান সরকার তা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে দেশের জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু জাতিভূক্ত জনগণের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় বাড়িঘর-উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। সরকার এবং প্রশাসন এখনো পর্যন্ত এর সাথে জড়িতের গ্রেফতার করতে পারেনি।
বক্তারা আরো বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে নগন্য। এছাড়াও প্রায় অর্ধেকেরও বেশী আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বর্তমান সরকারের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে সরকার দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে প্রবল চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়েছে। এর থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য এবং দেশের জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য জামায়াত-শিবিরকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার সুযোগ করে দিচ্ছে এবং এতে আওয়ামী-লীগ বিএনপি সহ সকল দলের লোকজন যুক্ত হয়ে সমন্বিত ও পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু পল্লী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে সহিংস আক্রমণ চালাচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, জাতিগত সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনোত্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু ও গারো-সান্তাল-মান্দিসহ বিভিন্ন জাতিসমূহ এবং তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর সহিংস আক্রমনের উপাদান দেশের সংবিধানের মধ্যেই রয়েছে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা দেশের সকল জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।
এছাড়াও সমাবেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আহতদের চিকিৎসা খরচ সরকারকে বহন করারও দাবী জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে মিছিলটি আবারো স্বনির্ভরে এসে শেষ হয়।