সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবিতে ঢাকায় পিসিপির বিক্ষোভ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
20.02.2015 PCP Dhaka prgm2ঢাকা: সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা সহ শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ঢাকা শাখা।

পিসিপি ঢাকা শাখার সভাপতি ত্রিশঙ্কু চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপুল চাকমা এবং সংহতি  জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফয়সাল মাহমুদ ও ছাত্র গণমঞ্চের আহবায়ক শান্তনু সুমন।এ ছাড়া সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর  রহমান। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনয়ন চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে কোন জাতি নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ করতে পারলে পরিপূর্ণ বিকাশ হয়, যা অন্যকোন ভাষার সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশে পাহাড় ও সমতলের সকল জাতিসত্তার শিশুদের নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা অত্যন্ত জরুরী। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে পিসিপি ২০০০ সাল থেকে এ বিষয়ে আন্দোলন করে আসছে। ২০০২ সালে  তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভসহ শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিকট পেশ করা হয়। সে বছর প্রধানমন্ত্রি দপ্তর থেকে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠি দেয়া হলেও বিএনপি জোট তাদের সরকারের সময়ে তা বাস্তবায়ন করেনি। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আওয়ামী মহাজোটের শিক্ষামন্ত্রী  নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১৪ সালের মধ্যে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ২০১৫ সাল এসেও তা চালু করা হয়নি এবং বাস্তবায়নের  লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।20.02.2015 PCP Dhaka prgm

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ভাবতে অবাগ লাগে যে দেশে মাতৃভাষা অধিকারের জন্য ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিকরা প্রাণ দিয়েছিলেন এবং তাদের প্রাণের বিনিময়ে ভাষার অধিকার অর্র্জিত হয়েছিল, সেই দেশে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও জাতিসত্তাসমূহের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা চালু করা হয়নি! জাতিসত্তাসমূহের নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত করার অর্থ হল, যে মহৎ উদ্দেশ্যে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তা ম্লান করে দেয়া ও ভাষা শহীদদের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা। মাতৃভাষায় পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হওয়া থেকে বোঝা যায় যে, এ দেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমুহ কতটা নিগৃহীত ও অবহেলিত।                                                                                                                         ঘোষণা দিয়েও ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসত্তাসমূহের মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদান বাস্তবে চালু না করায় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অতি শীঘ্রই জাতিসত্তাসমূহের নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা চালু এবং পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে মিছিল হয়।মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে পল্টন  মোড়ে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য পিসিপি শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফ দাবি হলো: ১.পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, ২.স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বাদ দিতে হবে, ৩.পাহাড়ি জাতিসত্তার বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী এবং সঠিক সংগ্রামী ইতিহাস স্কুল- কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, ৪.বাংলাদেশে সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক রচনা বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, ৫.পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি বিশেষ কোটা চালু করতে হবে।
——————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More