সরকারের ‘শাস্তিমূলক বদলীর’ খেসারত দিতে হচ্ছে পাহাড়বাসীকে!
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। সমতলে কোন শিক্ষক, পুলিশ অফিসার কিংবা সরকারি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অপরাধে জড়িয়ে পড়লেই তাকে বদলী করা হয় পার্বত্য চট্টগামে। বলা হয়ে থাকে ’শাস্তিমূলক বদলী’। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে সমতলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি সুযোগ-সুবিধা কম, তাই সমতলে অপরাধে জড়িয়ে পড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি হিসেবে পাহাড়ে বদলি করা হয়।
কিন্তু সরকারের শাস্তিমূলক বদলীটাই তাদের কাছে হয়ে যায় পোয়াবারো। পাহাড়ে এসে তারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে ক্ষমতার এক মহাপরাক্রমশালী রূপে আবির্ভুত হন। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে পাহাড়বাসীকে।
তেমনই সমতল থেকে বদলী হয়ে পাহাড়ে আসা খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বিল্ডিং ট্রেড বিভাগের শিক্ষক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা (৪৫)। যার বিরুদ্ধে ১০ম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে তিনি (সোহেল রানা) ২০০৬ সালের মে থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে বিল্ডিং ট্রেড বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ ছিল বলে জানা যায়। পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তাকে সেখান থেকে লক্ষ্মীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে বদলি করা হয়। এরপর সেখান থেকে তিনি বদলী হয়ে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন।
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজেও তিনি একই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। এতদিন নানা ভয়-ভীতির কারণে ঘটনা ধামাচাপা পড়ে থাকলেও সম্প্রতি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ১০ম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্রীকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে ওই ছাত্রী রাজী না হলে তিনি ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি ওই ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখালে পরে ভিকটিম ছাত্রী ঘটনাটি তার অভিভাবক ও সহপাঠীদের জানালে ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ চেষ্টাকারী সোহেল রানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধ্যক্ষের বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ঘটনায় জড়িত সোহেল রানাসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির জোর দাবি উঠে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন বিবৃতি দিয়ে সোহেল রানাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানায়। একই দাবিতে গতকাল শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এর আগে তারা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এলাকায় সোহেল রানার শাস্তির দাবি জানিয়ে পোস্টারিং করেছে।
ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই লম্পট শিক্ষক সোহেল রানা পালিয়ে নিজ জেলা টাঙ্গাইলে চলে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখান থেকেও তিনি ভিকটিম ছাত্রীকে ফোন করে তার কিছুই হবে না… এমন কথাবার্তা বলে হুমকি প্রদর্শন করেছেন বলে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, গতকাল ভিকটিম ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় লম্পট শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তারপরও শিক্ষকরূপী জানোয়ার সোহেল রানাকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদান করা হবে কি-না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। কারণ পার্বত্য চট্টগামের ক্ষেত্রে সরকার-প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আচরণই বারবার প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই এখন প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখার বিষয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।