সাজেকে পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ প্রচেষ্টায় জড়িত বিজিবি সদস্যের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Sajekpressconference,8.11.2014সাজেক(রাঙামাটি): রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাই এলাকার ভূজন কার্বারী পাড়ায় গত ৩ নভেম্বর সোমবার এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ প্রচেষ্টায় জড়িত বিজিবি সদস্যের শাস্তির দাবিতে ভিকটিমের উপস্থিতিতে আজ ৮ নভেম্বর শনিবার সাজেকের উজো বাজারস্থ সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী। সকাল সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কার্বারী ভূজন ত্রিপুরা, ভিকটিমের স্বামী কর্ণরাম ত্রিপুরা ও ভিকটিমের বড় বোনের জামাই তজেন্দ্র ত্রিপুরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা। এছাড়া সাজেক ইউনিয়নের ৭ ,৮, ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার জ্যোছনা রাণী চাকমা সহ এলাকার বিভিন্ন স্তরের নারী পুরুষ এতে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম ও এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনে দুই পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ঘটনার দিন কর্ণরাম ত্রিপুরার স্ত্রী জুম চাষের পাহাড় থেকে কাজ শেষ করে ঘরে ফেরেন। পরে তিনি ছড়ায় গোসল করতে ও পানি আনতে যান। তার সাথে আরো দুইজন নারী ছিলো। সেই সময় বিজিবি ক্যাম্প থেকে ৫ জন সদস্যও ছড়ায় নামে। তাদের মধ্যে তিন জন গোসল করে ক্যাম্পে ফিরে যায়। ছড়ায় থাকা বাকি দুইজনের একজন বিজিবি সদস্য কর্ণরাম ত্রিপুরার স্ত্রীর পাশে ঘেষে বসে। তখন বিজিবির সদস্য তাকে কী যেন বলে। তিনি বাংলা বলতে ও বুঝতে না পারায় ত্রিপুরা ভাষায় বলেন, আঙ বাংলা কক মাইয়া, আঙ বাই তেমালে তাপে থা? এর বাংলা হলো, আমি বাংলা ভাষা বুঝি না, আমার সাথে কেন ঝামেলা করো? এরপরই তিনি পাতিলে পানি ভরে বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটে আসতে থাকেন। ঠিক সেই সময় বিজিবির উক্ত সদস্য তাকে পিছন থেকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তিনি ভয়ে চিৎকার দিয়ে তাড়াতাড়ি পাহাড় বেয়ে গ্রামে চলে আসেন। এরপর ঘটনার কথা গ্রামবাসীকে জানালে গ্রামের যুবকেরা উত্তেজিত হয়ে তাকে ও তার বড়বোনকে সাথে নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে যায়। সেখানে ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার নারীটি অভিযুক্ত বিজিবি সদস্যকে সবার সামনে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সনাক্ত করে। উক্ত বিজিবি সদস্যের নাম আমাদের জানা মতে রফিকুল। অথচ বিজিবি কর্তৃপক্ষ বা সরকার উক্ত বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে আজো শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে আরো বলা হয়, সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম ভূজন কার্বারীর ক্রয় সূত্রে দখলাধীন ৪/৫ একরের একটি পাহাড়ে বিগত ৬ মাস আগে বিজিবি একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। জায়গার মালিকের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে ও আইনগত প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে বিজিবি ঐ ক্যাম্পটি স্থাপন করে। ক্যাম্পটি স্থাপনের পূর্বে বহু বছর ধরে আমরা নিরাপদে শান্তিতে আমাদের এলাকায় বসবাস করতাম। আমরা সাজেকের মতো দুর্গম অঞ্চলে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে, শিক্ষা চিকিৎসার অভাব নিয়ে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু তারপরও আমরা শান্তিতেই বসবাস করে আসছি। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা আমাদের এলাকায় দেখা দেয়নি। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর বিজিবি’র এক সদস্য শ্লীলতাহানি তথা ধর্ষণের চেষ্টা করার পর থেকে আমরা বড়ই অশান্তি ও দুঃখে রয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তারা জানান, বর্তমানে ভূজন কার্বারী পাড়ায় দিনে রাতে বিজিবি টহল অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। যে একটি মাত্র কুয়ো থেকে খাবার পানি সংগ্রহ এবং গোসল করতে হয় তাতে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে বিজিবি ক্যাম্প কতৃপক্ষ। কুয়োতে যাবার সময় ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তারা বলেন, উক্ত গ্রামের বাসিন্দাদের বছরে প্রায় সময় পানির সংকট থাকে। উক্ত কুয়োটি বিজিবি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকে এলাকার লোকজন ব্যবহার করে আসছে। কুয়োটি স্বাধীনভাবে ব্যবহারের অধিকার গ্রামবাসীদের রয়েছে। বিজিবি বর্তমানে মা-বোনের ইজ্জত কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি পানির কুয়োটির কেড়ে নিচ্ছে। তারা গ্রামবাসীদের ব্যবহৃত পানির কুয়োটি বিজিবি সদস্যদের ব্যবহার বন্ধের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে শিয়ালদাই থেকে বিজিবি ক্যাম্পটি অপসারণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টাকারী বিজিবি সদস্যকে শাস্তির দাবি জানানো হয়।
————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More