সাজেকে সেনা-সেটলার হামলার ৭ বছর

0

Sajek-hamla-photo2-300x241ডেস্ক রিপোর্ট।। ২০১০ সালের এ দিনে (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে সেনা ও সেটলার বাঙালিরা যৌথভাবে পাহাড়িদের ওপর বর্বরোচিত হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডবলীলা চালায়। পরদিন ২০ ফেব্রুযারিও পাহাড়িদের উপর হামলা চালানো হয়। সেনা জওয়ানরা নিরস্ত্র পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে ঘটনাস্থলে নিহত হন বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষী বিজয় চাকমা নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা।

হামলার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতেও ২২-২৩ ফেব্রুয়ারী সাতভাইয়্যাপাড়া-মা’জনপাড়ায় সেটলাররা সেনা সহায়তায় হামলা চালায়। সাতভাইয়্যাপাড়ায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। মা’জনপাড়ায় দোকানপাটসহ পাহাড়িদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পরের দিন খবংপুজ্যায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে নির্বিচারে গ্রামবাসীদের ধরপাকড় চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।

হামলাকারী দুর্বৃত্তরা সাজেকে ২টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩টি গীর্জাসহ ১১টি গ্রামের পাহাড়িদের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই করে দেয়। এছাড়া শিশুতলি গ্রামের বাসিন্দা রূপন চাকমাকে গুম করে ফেলে। এটা ছিল সাজেকের দ্বিতীয় বারের মত হামলা। এর আগে ২০০৮ সালেও সাজেকে সেনা সহায়তায় সেটলাররা পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। ফাইল ছবি।
# সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। ফাইল ছবি।

সাজেকে হামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে সেখানে সেটলার জনবসতি গড়ে তোলা। মূলতঃ এ ষড়যন্ত্র শুরু হয় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়। পরে ২০০৭ সালে-২০০৮ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত মঈন উদ্দিন – ফখরুদ্দীনের সরকারের আমলে উক্ত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চুড়ান্ত পদক্ষেপ গৃহীত হয়। সে সময় সেনা সহায়তায় নতুন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে সেটলারদের সাজেক এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়।

এর আগেও ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল সেনাবাহিনী ও সেটলাররা পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালায়। সে সময় ৪টি গ্রামের ৭৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু তারা ফিরে যেতে না যেতেই সেটলাররা সেনা সহায়তায় ৯ আগষ্ট আবার গঙ্গারামদোরের ৪টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এরপর ১৯ আগষ্ট সেটলাররা অপর এক হামলায় রেতকাবা গ্রামের লাদুমনি চাকমাকে কুপিয়ে খুন করে। বাঘাইহাট সেনা জোন এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকায় থেকে নেতৃত্ব দেয়।

সাজেক জনগণের প্রতিবাদ। ফাইল ছবি
সাজেক জনগণের প্রতিবাদ। ফাইল ছবি

উক্ত  হামলার  প্রতিবাদে সাজেকের জনগণ ব্যাপক গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দেয়। ভূমি বেদখল বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় বাঘাইহাট বাজার বয়কট করে গঙ্গারাম দোরে উজো বাজার নামে একটি জনগণের বাজার গড়ে তোলা হয়। এই উজো বাজার সাজেকের জনগণের সংগ্রামের এক মূর্ত প্রতীক। উজো একটি চাকমা শব্দ, যা যুদ্ধে বা সংগ্রামে রণধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পার্বত্য  চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে উজো বাজারের এক বিশেষ তাৎপর্য আছে বলেই সরকার ও সেনাবাহিনী এ বাজারকে ধ্বংস করার জন্য শুরু থেকেই উঠেপড়ে লেগে যায়। তারা জনগণকে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে বাজারটি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে হামলার ৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিচার ও শাস্তি হয়নি হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের। উপরন্তু পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সাজেক থেকে পাহাড়ি উচ্ছেদসহ নতুন নীল-নক্সা বাস্তবায়ন করছে সরকার-সেনাবাহিনী।
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More