নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ইউপিডিএফ-এর প্রতিক্রিয়া

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইউপিডিএফ-এর ছয় দফা দাবি

0

পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় বিষ্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এতে দেশে বিগত দশম সংসদ নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতির মতো অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং তার দায়-দায়িত্ব ক্ষমতাসীন সরকার এড়াতে পারবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ নেই, ইউপিডিএফ’কে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র জারি রয়েছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফ, জেএসএস ও তাদের সহযোগী সংগঠনের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন জারি রয়েছে। তাদের শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থককে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় হয় কারাগারে অন্তরীণ নয়ত এলাকাছাড়া করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সশস্ত্র নব্য মুখোশবাহিনী দিয়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে জনমনে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারী দল ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া হচ্ছে না। এক কথায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই এবং এরূপ পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন মন্তব্য করে ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন’ প্রসঙ্গে ইউপিডিএফ সভাপতি বলেন, ‘এমনিতে বেসামরিক প্রশাসনের ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সাথে জারি রয়েছে অপারেশন উত্তরণ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১ নির্দেশনা। তার ওপর নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করার অর্থ হবে পাহাড়িদের ভোট দানে বিরত রাখার সামিল। বিভিন্ন সময় গণহত্যা-দমনপীড়ন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উস্কানি-উলঙ্গ পক্ষপাতিত্ব, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ফলাফল প্রভাবিত করতে অন্যায় হস্তক্ষেপের কারণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিতর্কিত। তার জ্বাজল্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে ফলাফল পাল্টে দিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার নিশ্চিতভাবে অর্জিত বিজয় থেকে বঞ্চিত করেছে।’

জনমনে আস্থা সৃষ্টিকারী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে ইউপিডিএফ সভাপতি সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন দল কিংবা আইন প্রয়োগকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহ ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করতে যাতে অন্যায় হস্তক্ষেপ ও কর্তৃত্ব খাটাতে সক্ষম না হয়, সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সুযোগ প্রদানসহ নির্বাচন কমিশনকে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করারও আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি এটাও অভিমত ব্যক্ত করেন যে, দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিশেষ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

যেনতেন প্রকারে নির্বাচনে জেতার মানসিকতার জন্য শাসকগোষ্ঠী-ভুক্ত দল প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কড়া সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে দেশে গণতন্ত্র-সুশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি দুর্বল হয়েছে এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বার বার মাথাচারা দিয়ে উঠে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

ইউপিডিএফ নেতা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাসকগোষ্ঠী-ভুক্ত সরকারী ও বিরোধী দলগুলো যাতে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে না যেতে না পারে তার জন্য সতর্ক থাকতে প্রগতিশীল, প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তি তথা দেশের আপমর জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রসিত খীসা পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির জন্য ছয় দফা দাবি জানান। এগুলো হলো: এক. অবিলম্বে ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধরপাকড়, নির্যাতন বন্ধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা এবং আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া; দুই. সেনা-সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী নামক সন্ত্রাসী সংগঠনকে ভেঙে দেয়া ও এর সদস্যদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; তিন. সেনাবাহিনীর অপারেশন ও তল্লাশীর নামে সাধারণ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা; চার. ইউপিডিএফ-সহ সব দলকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেয়া তথা সুষ্ঠু, স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। পাঁচ. ভোটকেন্দ্র পুনর্গঠন, দূরবর্তী অঞ্চলের ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ শিথিল করা। ছয়. পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন নিশ্চিত করা।

_________________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More