সেনা-সৃষ্ট সন্ত্রাসী দলটিতে শুরুতেই ভাঙনের সানাই

0

খাগড়াছড়ি॥ সেনা গোয়েন্দাদের জন্ম দেয়া সন্ত্রাসী দলটিতে শুরুতেই ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে। অন্য দিকে সন্ত্রাসীরা সেনা আশ্রয়ে রাঙামাটির নান্যাচরে সন্ত্রাসী অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার সেনা পুলিশের প্রহরায় কতিপয় দাগী আসামী, অস্ত্র চোরাকারবারী, সমাজ ও দলচ্যুত ব্যক্তি খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে একটি নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেয়।

সেনা গোয়েন্দারা বেশ কয়েকদিন ধরে এ ধরনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের ষড়যন্ত্র করছিল বলে জানা যায়।

সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারীরা সেনা গোয়েন্দাদের পরামর্শে নিজেদেরকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) বলে দাবি করলেও জনগণের কাছে তারা ইতিমধ্যে জারজ পার্টি বা জারগুয়্য দল বলে পরিচিতি লাভ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে মাত্র ৩-৪ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি নিউজ ডটকম এর কাছে মন্তব্য করে বলেন, ‘না বোঝার কী আছে। ওরা (সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারীরা) আসলে একটি বিশেষ মহলের জারজ সন্তান। যারা সহজ বাংলা পর্যন্ত লেখতে ও পড়তে পারে না তারা আর কী পার্টি করবে ?’

তিনি মনে করেন যেভাবে জেএসএস ভেঙে দুই ভাগ হয়েছিল, এটা সে রকম কিছু নয়। জেএসএস থেকে তখন অধিকাংশ কেন্দ্রীয় সদস্য বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ইউপিডিএফের যারা তথাকথিত নতুন দল করেছে তাদেরকে চুনোপুটি বললেও বেশী বলা হয়। তাদের মধ্যে কোন কেন্দ্রীয় সদস্য তো নেই-ই, জেলা পর্যায়ের নেতাও নেই। তাছাড়া তপন জ্যোতি চাকমাসহ তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতি ও কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। জনগণের মধ্যে তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। সুতরাং তারা কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ জন উপস্থিত থাকলেও তাদের অন্তত একজনকে জারজ পার্টির চেলারা জোর করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

জারজ পার্টির চেলারা একটি মাইক্রো বাসে করে গিয়ে মাত্র ৫-১০ মিনিট থেকে সাংবাদিকদের হাতে কিছু কাগজপত্র দিয়ে ফিরে যায়। সংবাদ সম্মেলনের টেক্সটও তারা পড়েনি এবং সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি। জারজ পার্টির সাথে ঘনিষ্ট একটি সূত্রে ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জারজ পার্টির চেলারা ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করলেও অনেকে এর সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা জানিয়েছে।

ইউপিডিএফ-ভুক্ত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক নেতা সোনামুনি চাকমার নামও কমিটিতে রাখা হয়েছে। তিনি ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা, নতুন কুমার চাকমা ও মিঠুন চাকমাকে ফোন করে বলেছেন, তিনি সেনা গোয়েন্দাদের জন্ম দেয়া জারজ পার্টিতে নেই। এর কোন কার্যক্রমের সাথেও তার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই।

সোনামুনি চাকমা জানান, জারজ পার্টির আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা তাকে ফোন করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিলে তিনি তা সরাসরি প্রত্যাখান করে দেন। তিনি বলেন, “গত ভূমিধসে আমি আমার স্ত্রী কন্যা হারিয়েছি। আমি আর এসবে জড়িত হতে চাইনা। আমি নিস্ক্রিয় হয়ে থাকতে চাই।

বাকি চারজনকেও তাদের সম্মতি ছাড়া কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের সাথে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সত্য রঞ্জন চাকমা। তার বাড়ি বাঘাইছড়ি দজর হলেও তিনি খাগড়াছড়ির তেঁতুল তলায় একটি ঔষধের দোকানে বসেন। তার নামও জারজ পার্টির কমিটিতে রাখা হয়েছে।

তিনি সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, তাকে তপন জ্যোতিরা জোর করে নিয়ে যায়। কোথায় কেন যেতে হবে তাও বলেনি।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে বলে, “চল এদিকে যেতে হবে”, তারপর অনেকটা জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমি আসলে যেতে চাইনি।’

কমিটিতে থাকার ইচ্ছে না থাকলে কেন সে সংবাদ সম্মেলন থেকে উঠে আসেনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চারিদিকে পুলিশ ছিল। তাই উঠে আসতে পারিনি।’

তপন জ্যোতিদের নতুন পার্টি ঘোষণাকে ‘সব জালিয়াতি বানোয়াট’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জারজ পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনের জন্য অর্থ জোগান দেয় একজন সেনা গোয়েন্দা ও জেএসএস-এম.এন. লারমা গ্রুপের নেতা শক্তিমান চাকমা।

ঝরা পাতা
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা থুইক্যচিং মারমা বলেন, তপন জ্যোতি, জোলেয়্যসহ যারা জারজ পার্টি করেছে তারা ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা বাদ, জেলা ইউনিটের নেতাও নয়। তারা থানা কমিটির সদস্য ছিল মাত্র। অর্থাৎ তারা ইউপিডিএফ নামক বিশাল মহিরুহের মধ্যে দু’একটি মরা পাতা মাত্র। সুতরাং তাদের বিচ্যুতিতে ইউপিডিএফের কিছুই হবে না। তবে যেহেতু তাদের পেছনে আর্মিরা রয়েছে, তাই তারা সন্ত্রাসী কাজ কারবার করে জনগণের মধ্যে কিছুটা ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো ধ্বংস, তাছাড়া তাদের অন্য কোন পথ খোলা নেই।’

নান্যাচরে সন্ত্রাসী তপরতা
সংবাদ সম্মেলনের পর পরই গতকাল বিকেলের দিকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে জারজ পার্টির সন্ত্রাসীদেরকে নান্যাচর সেনা জোনে নেয়া হয়।

সেখানে রাত কাটানোর পর সন্ত্রাসীরা আজ সকালে নান্যাচর টিএন্ডটি এলাকায় বের হয়। তাদের হাতে ছিল অস্ত্র এবং তারা পিসিপি নেতা টুকুমনি চাকমার বাড়িসহ আরো কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশী চালায় ও লোকজনকে হুমকী ধামকি দেয়।

এরপর জারগুয়্যরা পায়ে হেঁটে পাদাছড়িতে যায় এবং সেখানে একটি দোকানে বসে বন্দুক দেখিয়ে লোকজনকে হুমকী দেয়।

প্রতিরোধ
তবে সেনা গোয়েন্দাদের ঔরসে জন্ম নেয়া জারজ পার্টির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গণপ্রতিরোধ শুরু হয়েছে।

গতকাল খাগড়াছড়িতে জনতা লাঠি মিছিল বের করে। আজ খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More