সেমুতাঙের গ্যাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পাচারের প্রতিবাদে মানিকছড়িতে সমাবেশ, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধা: আগামীকাল চারটি উপজেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সেমুতাঙের গ্যাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পাচারের প্রতিবাদে আজ ২ ডিসেম্বর, শুক্রবার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়ে বানচাল করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। সমাবেশ বানচাল করে দেয়ার লক্ষ্যে প্রশাসন মানিকছড়ি উপজেলায় আমতলি, উপজেলা কার্যালয় এলাকা, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কার্যালয় এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে। এছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনী রামগড়, জালিয়া পাড়া, সিন্দুকছড়ি, হাতিমুড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় লোকজনকে গাড়ি আটকিয়ে দিয়ে বাধা দিয়েছে। ফলে তারা সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
মানিকছড়ি উপজেলার রাজবাড়ী মাঠে আজ সকাল ১১টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের বাধার কারণে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পরে দুপুর ১টার সময় উপজেলার ধর্মঘর এলাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহাচিং মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অর্পন চাকমা ও জিকো ত্রিপুরা বক্তব্য রাখেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মাটিরাঙ্গা থানা শাখার আহ্বায়ক অংকন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশ প্রশাসনের বাধা ও সেমুতাঙ গ্যাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পাচারের প্রতিবাদে আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর শনিবার মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড় এই চারটি উপজেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সমাবেশে প্রশাসনের বাধার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ বানচাল করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকজনকে বাধা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মানিকছড়ির প্রশাসনকে দিয়ে সরকার গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তপে করেছে। এটা সরকারের চরম ফ্যাসিস্ট আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বক্তারা বলেন, সেমুতাঙ গ্যাস ত্রে থেকে উত্তোলিত গ্যাস পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের চাহিদা পূরণ না করে সরকার চট্টগ্রামে পাচার করছে। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না। এই গ্যাস পাচার অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তরা হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে। মানিকছড়ি ও লীছড়িতে বোরকা সন্ত্রাসীদের খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে সেনা ও প্রশাসন কর্তৃক সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত জিইয়ে রাখার কৌশল হিসেবে তাদেরকে ইউপিডিএফ-এর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।
বক্তারা অবিলম্বে সেমুতাঙের গ্যাস বাইরে পাচার বন্ধ করে এই গ্যাস দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের চাহিদা পূরণ করা, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, মানিকছড়ি ও লক্ষীছড়িতে বোরকা সন্ত্রাসীদের সেনা মদদান বন্ধ করা ও বোরকা পার্টি ভেঙে দেয়া, সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনা শাসনের অবসান, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন, প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।