স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সফর দুরভিসন্ধিমূলক ও ফৌজি শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ : ৮ সংগঠন

0
ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফরকে দুরভিসন্ধিমূলক ও ফৌজি শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ বলে মন্তব্য করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ৮ সংগঠন।আজ ৯ জুলাই মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ৮ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, সেটলারদের সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফর দুরভিসন্ধিমূলক এবং তা ফৌজি শাসক জিয়া-এরশাদের নির্লজ্জ পদাঙ্ক অনুসরণ। এই সফরে উক্ত দুই নেতা কেবল সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক বাছাইকৃত চিহ্নিত কয়েকটি সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে একদিকে চরম পক্ষপাতিত্ব এবং অন্যদিকে নিজেদের সেনা নীল নক্সার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যার পরিণাম কখনোই শুভ হতে পারে না।

আট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্ত্মর্ভুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ একটি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত ও পরিচিত। ভৌগলিক, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে দেশের সমতল এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। উপাদন পদ্ধতি ও ভূমি ব্যবস্থাপনাও এখানে আলাদা। কিন্তু বৃটিশ আমল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাহ্য করার ফলে স্থানীয় জনগণ পর্যায়ক্রমে ভূমির উপর তাদের অধিকার হারাতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবং বিশেষত জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে গোপন সার্কুলারের মাধ্যমেকয়েক লক্ষ বহিরাগত পরিবারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত জমিতে অবৈধভাবে পুনর্বাসন করার ফলে ভূমি সংক্রান্ত্ম জটিলতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত প্রথাগত ভুমি ব্যবস্থাপনার রীতি ও পাহাড়িদের ভূমি অধিকার হারানোর ধারাবাহিক ইতিহাসকে আমলে না নিয়ে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করা হলে তা ভূমি সমস্যা সমাধানের বদলে আরো জটিল করে তুলবে, যা কারোর কাম্য হতে পারে না।’নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ভূমি কমিশন আইনকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক করতে হবে, এক ব্যক্তির মর্জির উপর এই কমিশনকে চলতে দিলে তাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, পার্বত্য চট্টগ্রামে আবহমানকাল ধরে চলে আসা প্রথাগত ভূমি আইনকে স্বীকৃতি দিয়ে সেই আইনের ভিত্তিতে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে এই আইন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা আখ্যায়িত করে আট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘অতীতে স্বৈরাচারী সরকারসমূহ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বহিরাগতদের কাছে হাজার হাজার একর জমি অবৈধভাবে বন্দোবস্তী দিয়েছে। প্রকৃত ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ জমি পাহাড়িদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে চলে আসে বহিরাগতদেরকে সমতলে নিজ এলাকায় পুনর্বাসনের বিষয়টি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদেরও যথাযথ পুনর্বাসন জরম্নরী। অথচ সরকার মরুঝড়ে বালিতে উট পাখির মাথা গুঁজে থাকার মতো এ দিকটি বরাবরই উপেক্ষা করে চলেছে।’

নেতৃবৃন্দ সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের আসল অধিবাসী প্রকৃত ভূমি মালিকদের আশা আকাঙ্ক্ষা ও দাবি দাওয়ার প্রতিফলন না ঘটে এবং স্থায়ী বাসিন্দারা যদি তাদের হারানো বংশ পরম্পরার পৈতৃক জায়গা-জমি ফিরে না পায়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনরায় গণবিদ্রোহ দেখা দিতে বাধ্য। আর তখন তার ফলাফলের দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্য চিং মারমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শান্তি প্রভা চাকমা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সদস্য সচিব আনন্দ প্রকাশ চাকমা।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More