হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৮ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত : পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
“সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম ও পাহাড়ি নারী সমাজের ভুমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ২৩-২৪ মার্চ দু‘দিন ব্যাপী ৮ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আজ ২৩ মার্চ শুক্রবার শুরু হয়েছে। সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নারাঙখিয়াস্থ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলরুমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোনালী চাকমা। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ভুলন ভৌমিক, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি. সচিব চাকমা ও প্রদীপন খীসা। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি অপরাজিতা খীসা, ঘিলাছড়ি নারী সমাজের সদস্য কাজলী ত্রিপুরা ও সাজেক নারী সমাজের সদস্য কৃপারাণী চাকমা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান ও পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সোনালী চাকমা বলেন, এককভাবে কারোর কোন অধিকার পৃথকভাবে পাওয়ার চিন্তা অযৌক্তিক। সংবিধানে যেহেতু আমাদের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টির হাত ধরে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা হবে না। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুনিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য, ভূমি থেকে বাস্তুহারা না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এ্যাডভোকেট ভুলন ভৌমিক তার বক্তব্যে বলেন, সংবিধান হচ্ছে একটা রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি নির্ধারণীর ভিত্তি। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বুর্জোয়া শ্রেণীকে রক্ষা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। একটা সংবিধানকে যদি ১৫ বার কাটা হয় তাহলে সেটাতে কি আর থাকে? কাজেই, এই সংবিধান হাসিনা-খালেদার হতে পারে কিন্তু ১৫ কোটি জনগণের নয়।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলেই সবকিছু ঠিক হবে না। আসলে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ল্েয সমগ্র জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। কৃষক, শ্রমিক সহ সকল শ্রেণীর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অধিকার অর্জন করতে হবে।
ব্যরিষ্টার সাদিয়া আরমান তার বক্তব্যে বলেন, একটি জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক জাতি, অনেক সংস্কৃতির বৈচিত্র্য থাকে, এটা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়। অস্ট্রেলিয়া, দণি আমেরিকাসহ অনেক দেশেই বহু জাতির বসবাস। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি দেশে যতগুলো জাতিই থাকুক তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া।
তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংখ্যালঘু জাতিদের স্বীকার না করা খুবই হতাশাজনক। যারা বাঙালি নয় তাদের উপর যে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হলো তা কোন অবস্থাই গ্রহণযোগ্য নয়। অন্য দেশের সংবিধানে সকল জাতির প্রতিনিধি যেন সংসদের প্রতিতিনধিত্ব করতে পারে তার জন্য সংরতি আসনের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে বাঙালি ছাড়া অন্য জাতিসত্তার অস্তিত্বের স্বীকৃতি নেই।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সমস্যার মধ্যে ভূমি হচ্ছে প্রধান সমস্যা। যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। কাজেই ভাষার স্বীকৃতি, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
সচিব চাকমা বলেন, সমাজ জাতির প্রয়োজনে আমদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পতাকাতলে একত্রিত হতে হবে। আজকে আমরা জায়গা-জমি হারাচ্ছি, আমাদের নিজের জাতিসত্তার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে ঠিকে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানে প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি না থাকায় পাহাড়িরা প্রতিনিয়ত নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। শোষণহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই। তাই সংগঠিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তনি নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রদীপন খীসা তার বক্তব্যে বলেন, শাসক শ্রেণী তাদের শাসন কার্য পরিচালনার জন্যই মূলত সংবিধান সংশোধন করেছে। আমাদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করতে হবে। আর পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার অর্জিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজেরও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্য নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
আগামীকাল ২৪ মার্চ দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন চলবে এবংঅধিবেশন শেষে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।