পানছড়িতে নব্য আল-বদর বাহিনীর দৌরাত্ম্য!

অপহরণের পর যুব ফোরাম নেতাসহ ৪জনকে সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর!

0

পানছড়ি : গতকাল ২০ অক্টোবর শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৮টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) এর পানছড়ি উপজেলা সহ-সভাপতি বোধিরাম ত্রিপুরা (কার্বারী) (৩৯), পিতা- গেদা কুমার ত্রিপুরা, সাং- ছোটরাইথোইচাই পাড়া, ৪নং লতিবান, উপজেলা- পানছড়ি মোটরসাইকেল যোগে আসার সময় পানছড়ি কলেজ গেইট এলাকা থেকে মোটরসাইকেলসহ জেএসএস এমএন লারমা দলের কতিপয় বিপদগামী নেতাকর্মী কর্তৃক অপহরণের শিকার হন। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলে ‘ঘটনাটি অবগত হয়েছি এবং পদক্ষেপ নিচ্ছি’ বলে জানানো হয়।

এরপর একইদিন বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার পাগুজ্জেছড়ি থেকে (১) দীপন আলো চাকমা (৩২), পিতা অজ্ঞাত, সাং- নলীন্দ্র পাড়া, ৫ নং উল্টোছড়ি ইউপি, পানছড়ির নেতৃত্বে (২) জ্বলন্ত চাকমা (২২), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- তারাবন ছড়া, ৪নং লতিবান ইউপি(৩) কল্যাণ মিত্র চাকমা(২৯), পিতা অমর চাকমা জঙ্গী, সাং- কিলোমিটার, ৪নং লতিবান ইউপি (৪) রিটন চাকমা (৩৮), পিতা অজ্ঞাত, সাং- কিলোমিটার, ৪নং লতিবান ইউপি (৫) টিটো চাকমা(২২), পিতা- ব্যার‌্যাল্লো, সাং- তারাবন ছড়া, ৪নং লতিবান ইউপি (৬) অভিজ্ঞ চাকমা(১৯), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- তারাবন ছড়া, ৪নং লতিবান ইউপি (৭) রুবেল চাকমা(২০), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- তারাবন ছড়া, ৪নং লতিবান ইউপি ও (৮) অমর চাকমা(৪০), পিতা- হেম রঞ্জন চাকমা, সাং- লতিবান, ৪নং লতিবান ইউপিসহ আরো ১০-১২ জন সশস্ত্র জেএসএস এমএন লারমা (স্থানীয়ভাবে সংস্কার নামে পরিচিত) দলের সদস্য মিলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রূপায়ন চাকমাসহ আরো তিন জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহৃতদের মধ্যে থেকে রূপায়ন চাকমা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও বাকিদেরকে সন্ধ্যার সময় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

রূপায়ন চাকমা’র সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপহরণের পর সবাইকে লতিবান এলাকায় (রিপন চাকমা বাড়ির পাশে) একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সারাদিন আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর লতিবান মঞ্জু আদামে (দত্তবাবুর বাড়ির পাশে) নিয়ে আবারো মরধর করা হয়। পরে পানছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে নিয়ে গিয়ে একটা লম্বা রশি দিয়ে সবাইকে একসাথে পিছমোরা করে বেঁধে রেখে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনী পুলিশকে সাথে নিয়ে হাজির হয়ে আপহৃতদের আটক করে নিয়ে যায়।

বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে গতকাল থেকে অপহৃতদের থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে সেনাবাহিনী এসে পানছড়ি সাব জোনে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী অপহৃতদের বিরুদ্ধে সাজানো অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রস্তুুতি নিচ্ছে। অথচ যারা গণঅপহরণ করেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানছড়ি নিবাসী এক গ্রাম প্রধান (কার্বারী) ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এটা মারাত্মক রকমের বাড়াবাড়ি। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা সেনাবাহিনীর প্রমোশন বাণিজ্যের সিণ্ডিকেটের মুখোশ পানছড়ির ঘটনার মাধ্যমে জনসম্মুখে উম্মোচিত হয়েছে।পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিশেষ দলের একাংশের নেতা কর্মীরা ’৭১ এর আল-বদর বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এতোদিন যে গোপনে গণবিরোধী কাজ চালিয়ে আসছিল তাও দিবালোকের মতো জনগণের কাছে পরিস্কার হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একদল অপহরণ করে সারাদিন মারধর করার পর একটি বিশেষ স্থান থেকে পিছমোরা করে বাধা অবস্থায় সেনাবাহিনী আটক করে নিয়ে আসা শুধু রহস্যজনকই নয়, এটা ছিল পুর্বপরিকল্পিত ও সাজানো নাটক। যারা অপহরণ করেছে তাদের খোঁজ না করে উল্টো অপহৃতদের সেনা জোনে নিয়ে মারধর ও তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়েরর প্রস্তুতি গ্রগণ সেনাবাহিনীর প্রমোশন বাণিজ্যের সিণ্ডিকেটরই  নগ্ন স্বরূপ! তিনি নব্য পাক দখলদার ও আল-বদরদের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
__________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More