অপহৃত লেনিন চাকমাকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
সিএইচটিনিউজ.কম
জনসংহতি সমিতি (সন্তু গ্রুপ) কর্তৃক অপহৃত গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা লেনিন চাকমার স্ত্রী স্বপ্না চাকমা এক সংবাদ সম্মেলনে তার স্বামীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। আজ ১ নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লবে তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় তার শ্বশুর অর্থাৎ লেনিন চাকমার পিতা নয়াধন চাকমাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবিলম্বে লেনিনের অপহরণ মামলায় দণ্ডবিধির ৩৬৪ নং ধারা সংযোজন করা, লেনিন চাকমার অপহরণকারী জুনান চাকমা, অজয় চাকমা, সুমন চাকমা, বিকাশ চাকমা ও তাপস চাকমাসহ অন্যান্য আসামীদের জামিন প্রত্যাহার করা, আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে লেনিন চাকমার অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিয়ে তাকে জীবিত বা মৃত উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও লেনিন চাকমার অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়া তিনি সন্তু লারমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা লেনিন চাকমাকে অপহরণ করেছে তারা আপনার দলের সদস্য। দলের প্রধান নেতা হিসেবে আপনি তাদের ওপর চাপ দিন যাতে তারা লেনিন চাকমার সন্ধান দেয়, অপহরণকারীদেরকে দল থেকে বহিস্কার করুন, কারণ যারা অপহরণকারী ও সন্ত্রাসী তারা জনগণের কোন মঙ্গল করতে পারে না, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে আমাদের মতো নিরীহ জনগণকে শান্তিতে থাকতে দিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনিলেনিন চাকমার অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ২৩ এপ্রিল ২০১১লেনিন চাকমা চট্টগ্রামের দেওয়ান হাটের রঙ্গিপাড়া থেকে অপহৃত হন। তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য। তার আসল বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলাধীন বেতছড়ি রঞ্জন কার্বারী পাড়া। তিনি দেওয়ান হাটে 4S Fashion নামে একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করতেন। জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের সদস্য জুনান চাকমা, অজয় চাকমা, সুমন চাকমা, তাপস চাকমা ও বিকাশ চাকমাসহ আরো ৪/৫ জন তাকেসহ শৈইচাপ্রুখেয়াং ও জুয়েল চাকমা নামে আরো দু’জনকে ঐ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অপহরণ করে। অপরহণের পর তাদেরকে প্রথমে বন্দর থানাস্থ একটি বাসায় নেয়া হয়। পরদিন অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল শৈইচাপ্রু খেয়াং ও জুয়েল চাকমা সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে আসেন। তবে লেনিন চাকমা জিম্মি অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। এরপর থেকে আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অপহরণের পর আমি বেশ কয়েক বার ডবল মুরিং থানায় গিয়ে ধর্ণা দেয়ার পরই কেবল গত ২৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করতে সম হই। মামলা নম্বর হলো ৩৮/১৪৭। ধারা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৪২/৩৪৩/৩৪। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে নামমাত্র তল্লাশি চালিয়ে তাদের দায়িত্ব খালাশ করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন,গত ২ মে আসামী জুনান চাকমা, অজয় চাকমা, বিকাশ চাকমা, সুমন চাকমা ও তাপস চাকমা কোর্টে আত্মসমর্পন করলে কোর্ট তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এতে আমি হতবাক হয়ে যাই। কারণ এত বড় একটা অপহরণ ঘটনা এবং অপহৃত ব্যক্তির এখনো কোন খোঁজ মেলেনি, তারপরও কীভাবে আসামীরা ছাড়া পেতে পারে? পরে জানতে পারি যে, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসামীগণকে বাঁচানোর জন্য আমার দেয়া এজাহারকে জামিনযোগ্য ধারার অপরাধ হিসেবে রেকর্ড করেছেন। শুধু তাই নয়, গত ২৮ এপ্রিল লেনিন চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে এই প্রেস কাবের সামনে একটা মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ তাতেও বাধা দেয়। এরপর আমি গত ৫ মে ২০১১ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এজাহারের আসল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৬৪ নং ধারা সংযোজনের আবেদন করি। বিজ্ঞ আদালত আমার আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু তারপরও অদ্যাবধি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত ধারা সংযোজন করেননি। বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে মামলাটি সিআইডির নিকট হস্তান্তর করা হলেও কোন অগ্রগতি পরিলতি হচ্ছে না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অপহরণের ৬ মাস পরও লেলিন চাকমাকে উদ্ধারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি মামলা পর্যন্ত ঠিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়নি। ফলে আসামীরা বীরদর্পে ঘোরাফিরা করছে। আমি জানতে চাই, লেনিন চাকমা কি এখনো জীবিত আছেন, নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আসামীগণকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে লেনিন চাকমার হদিস পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমি আমার দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে (একটি ১০ বছর ও অন্যটি মাত্র ৮ মাস) খুব অসহায়ভাবে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। আমার স্বামীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগারকারী। আমি এখন দিশেহারা, কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না। একজন মানুষের ওপর এত অবিচার হতে পারে আমি আগে কখনো ভাবি নি।