অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন বাবুছড়ার তিন সাহসী নারী

0

সিএইচটিনিউজ.কম
3 women
খাগড়াছড়ি: বেশ কয়েক দফা জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর অবশেষে কারাগার থেকে মু্ক্তি পেয়েছেন বিজিবির মামলায় আটক হওয়া দীঘিনালা বাবুছড়ার  তিন সাহসী নারী ফুলরাণী চাকমা(৫৫) মায়ারাণী চাকমা (৫০) ও অপ্সরী চাকমা (১৬)।

বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত ১০ জুন স্থানীয় পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর বিজিবি, পুলিশ ও সেটলাররা হামলা চালায়। এ ঘটনার পর বিজিবির দায়ের করা মামলায় এই তিন নারীকে আটক করে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তিন জনের মধ্যে আজ বুধবার খাগড়াছড়ি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ফুলরাণী চাকমা। জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকী তার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার অপ্সরী চাকমা ও ৩ জুলাই মায়ারাণী চাকমা জামিনে মুক্তি পান।

উল্লেখ্য, জামিনে  মুক্তি পাওয়া এই তিন নারীসহ এলাকার বেশ কয়েকজন নারী গত ১০ জুন যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি কর্তৃক বেদখল করা নিজেদের জায়গায় কলাগাছ রোপন করতে যায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে তারা তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং বিজিবি’র বিরুদ্ধে সাহসিকতার সহিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বিজিবি-পুলিশ ও সেটলারদের লাঠিসোটা, টিয়ারগ্যাস্ ও রাবার বুলেটের কারণে তারা তিনজন সহ ওই এলাকার ১৮জন পাহাড়ী নারী-পুরুষ আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ফুলরাণী চাকমা, মায়ারাণী চাকমা, অপ্সরী চাকমা ও গোপা চাকমাকে ভর্তি করা হয় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে। যথারীতি চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু ঘটনার পরদিন উল্টো বিজিবি সুবেদার মেজর গোলাম রসুল ভূঁইয়া ১১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫০ জন পাহাড়ি গ্রামবাসীকে আসামি করে দীঘিনালা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এরপর ১৩ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের ৪ জনকে আটক দেখায় পুলিশ। ১৭ জুন তাদেরকে তোলা হয় আদালতে। আদালত তাদের ৪ জনের মধ্য থেকে গোপা চাকমাকে  জামিন দিলেও বাকীদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সেই থেকে তারা কারাগারে আটক অবস্থায় ছিলেন।

তাদেরকে মুক্তির জন্য আদালতে বেশ কয়েকবার জামিন প্রার্থনা করে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত বার বার তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দিয়ে কষ্টকর জীবন যাপন করতে বাধ্য করে। এর মধ্যে নাবালিকা হওয়ার কারণে অপ্সরীকে হাটহাজারীর একটি সেইফ হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত পৃথক পৃথকভাবে তারা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হলেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামহ দেশ প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দেয়।  বিভিন্ন সংগঠন বিজিবি’র দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য জোরালো দাবি তোলে।  এ ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শনে বাবুছড়ায় সফর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের(সিএইচটি কমিশন) একটি প্রতিনিধি দল।

আটক হওয়া নারীরা কোন অন্যায় করেনি। তারা নিজ জায়গা-জমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদেরকে আটকের মাধ্যমে রাষ্ট্র চরম অমানবিক কাজ করেছে। এর মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট চরিত্রও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

প্রতিবাদী এই তিন নারী জামিনে মুক্তি পেলেও  বিজিবির দায়ের করা উক্ত মামলায় বর্তমানে আরও চার গ্রামবাসী (যারা ষাটোর্ধ বয়সী) আটক রয়েছেন। অচিরেই তাদেরও নিঃশর্ত মক্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More