স্মারকলিপি
অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের করোনাকালীন সমস্যাসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
খাগড়াছড়ি ।। পার্বত্য চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের করোনাকালীন সমস্যাসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্ট জনেরা।
আজ রবিবার (০৪ অক্টোবর) ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী পুনর্বাসন ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা উক্য জেন ও শিক্ষাবিদ মধুমঙ্গল চাকমার নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানের বাসভবনে ১০৭ জনের স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে বিশিষ্ট জনের মধ্যে স্বাক্ষর করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, জুয়ামলিয়ান আমলাই, প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা, প্রফেসর বোধিসত্ত্ব চাকমা, প্রফেসর মধু মঙ্গল চাকমা, সাবেক যুগ্ম সচিব উক্য জেন প্রমুখ।
এছাড়া সংগঠনের মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান ও কার্বারি নেটওয়ার্ক, খাগড়াছড়ি জেলা কার্বারি এসোসিয়েশন, সাজেক ইউনিয়ন কার্বারি এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড বায়োডাইভার্সিটি (বিপনেট), বম সোশ্যাল কাউন্সিল, মালেইয়া ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল (বি.এম.এস.সি.) ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ (টি.এস.এফ.)।
এ ছাড়াও, উক্ত স্মারকলিপির সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ব্যারিস্টার সারা হাসেন, গবেষক ড. স্বপন আদনান, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ড. ইফতেখারুজ্জামান, এলআরডির নির্বাহি পরিচালক শামসুল হুদা ও ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব অস্ট্রেলিয়ার প্রফেসর ড. বীণা ডি’কষ্টা।
স্মারকলিপিতে সরকারের প্রশংসনীয় ত্রাণ কার্যক্রম সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ের কিছু সমস্যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদাপূরণ হতে পারেনি বলে উল্লেখ করে বলা হয়, দুর্গম পাহাড়ের অধিকাংশ পরিবার দিন-মজুর ও জুমচাষী হওয়ায় তাদের অধিকাংশের এক সপ্তাহ কিংবা তারও কম দিন চলার মতো খাদ্য মজুদ থাকে। এ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিতরণকৃত ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য কদাচিৎ এ সব এলাকায় পৌঁছাতে পেরেছে। অধিকন্তু, এ সব এলাকা পানীয় জল, যোগাযোগের জন্য রাস্তা ও যানবাহন, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটে, পাহাড়ে যে সব অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তু রয়েছেন (আনুমানিক ৮৬০০০-৯৬০০০) তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এঁরা বিগত আশির দশকে অভিবাসিত বাঙালি পরিবার ও ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির আওতায় ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থীদের মতো কোন নিয়মিত রেশনও পান না।
১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে তৎকালীন বিরাজমান অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে যে সমস্ত পাহাড়ি পরিবার অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন এবং বর্তমান বাস্তবতায় এখনো যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক নিজ বসতভিটায় ফেরত যেতে পারেননি, তাঁরা বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পরিবারের সংখ্যা ৮০,০০০ – ৯৬,০০০ এর মত, যাঁদের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনতিবিলম্বে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা জরুরি বলে স্মারকলিপিতে তুলে ধরা করা হয়।
স্মারকলিপিতে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে-
১. অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা;
২. দীর্ঘমেয়াদি ত্রাণ ও যথাযথ পুনর্বাসনসহ যাঁরা বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, নারী প্রধান পরিবার ইত্যাদি তাঁদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর আওতায় আনা:
৩. ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসিত বাঙালি পরিবারদের অনুরূপ অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদেরকে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নিয়মিত মাসিক রেশনিং-এর আওতায় আনা;
৪. অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
৫. ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের কর্ম পরিধি বিস্তৃত করা;
৬. বৎসরে একবার অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পর্কিত অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রকাশ করা।