অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার্থে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান ইউপিডিএফের

0

সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা সমুন্নত রেখে অস্তিত্ব আত্মরক্ষার্থে সংগঠিত হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউপিডিএফ। বৈসাবি (বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু) উপলক্ষে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ থেকে আজ ১২ এপ্রিল প্রচারিত এক প্রচারপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈসাবির শুভেচ্ছা জানিয়ে প্র্রচারিত প্রচারপত্রে বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সেনা মোতায়েনের পর থেকে পাহাড়ি জনগণের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে সত্যিকার আনন্দ উৎসব। বারে বারে দেখা যায়, উৎসব ঘনিয়ে এলে বা উৎসব শেষে পার্বত্যবাসীদের ওপর নেমে আসে নির্মম আঘাত, যার জলজ্ব্যান্ত দৃষ্টান্ত লোগাঙ হত্যাকা-, সে দুঃসহ স্মৃতি মানুষ আজও ভুলতে পারে নি। লোগাঙ হত্যাযজ্ঞের পর তালিকা দীর্ঘ! একে একে যুক্ত হয়েছে সাজেক-সাতভাইয়্যাপাড়া-মহাজন পাড়া-শনখোলা-কমলছড়ি-বেতছড়িসহ–বহু হৃদয় বিদারক ঘটনা। পার্বত্যবাসীর জীবনে আরও কত দুঃখজনক ঘটনা অপেক্ষা করছে, কে জানে!!! দখলদার সেনা দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় উদ্ধত রক্তচক্ষু রাইফেল বেয়নেটের মুখে প্রকৃত অর্থে কোথাও আনন্দ উৎসব হয় না।

Boisabi Leafletপ্রচারপত্রে আরো বলা হয়, দেশের এক-তৃতীয়াংশ সৈন্যবাহিনী মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এলিট ফোর্স র‌্যাব-এর নতুন ইউনিট ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ মোতায়েনের সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের জীবনে অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, বলপ্রয়োগ ও দমন নীতির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণকে পদানত রাখাই মূল উদ্দেশ্য, তা-ই এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। র‌্যাব (র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) ক্রস ফায়ারে লোকহত্যার কারণে দেশে-বিদেশে নিন্দা ও ঘৃণা কুড়িয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তজার্তিক সম্প্রদায় এ সংস্থাকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে। চট্টগ্রামে মাজারের টাকা লুট, স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়, ফেনসিডিল-ইয়াবা পাচারের মত বহু নিন্দনীয় অপকর্মের সাথে র‌্যাব-এর সংযুক্তির কারণে দেশের মানুষের নিকট সংস্থাটি মূর্তিমান মৃত্যুদূত হিসেবে চিহ্নিত। এ ধরনের একটি সংস্থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন স্পষ্টতই পাহাড়ি জনগণের সাথে সরকারের শত্রুতা করা ছাড়া কিছুই নয়। যদিও আওয়ামী লীগ পাহাড়ি জনগণের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল সংখ্যালঘু দরদী’ দল হিসেবে প্রতারণামূলক প্রচারণা চালিয়ে থাকে, যার সাথে গলা মেলায় একশ্রেণীর ধান্দাবাজ লোক। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগই পাহাড়ি জনগণকে সবচে’ বেশী অনিষ্ট করে চলেছে, যার দীর্ঘ বিবরণ এখানে দেবার অবকাশ নেই। দেশের অন্যত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নানাভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মৌলিকভাবে বিএনপি-জামাতের সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য নেই।

প্রচারপত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-খারাপির নানা অপরাধমূলক ঘটনায় র‌্যাব মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হবে, সে আশঙ্কায় জনগণ শঙ্কিত। তথাকথিত ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা দিয়ে সরকারকে জনমন থেকে আশঙ্কা দূর করতে হবে। অন্যথায় তদজনিত যে কোন পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী হতে হবে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে প্রচারপত্রে বলা হয়, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে জাতীয়তা কেড়ে নিয়ে ‘বাঙালি জাতীয়তা’ চাপিয়ে দেয়া, ‘পার্বত্য চুক্তি’র প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে আন্দোলনে বিভাজন সৃষ্টি, ক্ষমতা-অর্থ-নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আন্দোলনকারীদের একটি গোষ্ঠীকে নিজ পক্ষে বাগিয়ে নিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বাধিয়ে দেয়ায়–আন্দোলনকামী পাহাড়ি জনগণ এমনিতে আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। বহু প্রতিশ্রুতি চটকদার আশ্বাস প্রদান সত্ত্বেও বারে বারে আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে।

এতে আরো বলা হয়, বান্দরবানের রুমায় সেনা গ্যারিসন সম্প্রসারণের নামে মুরুং জাতিসত্তাসহ স্থানীয়দের উচ্ছেদ অভিযান, রাঙ্গামাটির লংগুদু-খাগড়াছড়ির রামগড়-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-মহালছড়িতে ব্যাপক হারে ভূমি বেদখল, তার সাথে পাল্লা দিয়ে নাক্ষ্যংছড়িতে নারী অপহরণসহ খাগড়াছড়িতে সবিতা-ভারতীদের ধর্ষণ-খুন-অপহরণ–উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। এতে সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন সরকার নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি করতে উদ্ধ্যত হয়েছে। সরকার র‌্যাব-এর নতুন ইউনিট ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ মোতায়েনের পদক্ষেপ নিয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার্থে লড়াই ছাড়া পার্বত্যবাসীদের সামনে অন্য কোন বিকল্প পথ নেই। এবারের বৈসাবি এ সমস্ত কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন দুর্ঘটনা আশঙ্কায় সচেতন লোকজন দারুণ উৎকণ্ঠিত।

প্রচারপত্রে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা সমুন্নত রাখা;  অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার্থে সংগঠিত হওয়া; নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলা; সরকারের মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্যে বিশ্বাস স্থাপন না করা; জাতীয় বেঈমানদের বাড়াবাড়ি বরদাস্ত না করা; আন্দোলন বিকিয়ে দেয়া গণশত্রুদের খপ্পড়ে পা না দিয়ে সতর্ক থাকা; চাপিয়ে দেয়া ‘বাঙালি জাতীয়তা’র বিরোধিতা করে স্ব স্ব জাতীয়তা তুলে ধরা; বান্দরবানের রুমাসহ বিভিন্ন সেনা স্থাপনা নির্মাণ-সম্প্রসারণের নামে ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করা; কল্পনা চাকমাকে অপহরণকারী লে. ফেরদৌসসহ তার দোসরদের গ্রেফতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সবিতা-ভারতীদের ধর্ষক-খুনীসহ এ যাবত বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার শাস্তির দাবিতে সংগঠিত হওয়া; পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জোরদার করা এবং ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হবার আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More