ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে

আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের বিক্ষোভ

0

ঢাকা ।। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাত ছাত্রনেতার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি ও রাষ্ট্রীয় হেফাজতে লেখক মুশতাকের হত্যা ও কার্টুনিস্ট কিশোরের নির্যাতনের বিচারের দাবিতে ঢাকা আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ। এতে প্রগতিশীল ৯টি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

আজ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ ২০২১) সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে যেতে চাইলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। পরে তারা সেখানে সমাবেশ করেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও ছাত্র ফেডারেশনের (মুক্তি কাউন্সিল) কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান, লেখক গবেষক মাহা মির্জা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয়, ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মোমিন বক্তব্য দেন।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী নিজেদের নিরাপত্তায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট করেছিল৷ সেই আইনের সন্নিবেশন আজকে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। তার মানে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর মনোজগৎকেই ধারণ করে৷ এটিই এই আইন বাতিলের পক্ষে কারণ হিসেবে যথেষ্ট৷ গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কাজ আগের সরকারের সমস্ত পাপ স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা৷ সরকারগুলো এমন পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে যে আমরা আগের সরকারের পাপাচার ও জুলুমগুলো ভুলে যাচ্ছি।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বর্তমান সরকার যা করছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী৷ লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর তা নিয়ে কোনো জবাবদিহি এই সরকার করেনি। এই কর্মসূচির পর আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলন-কর্মসূচি করব।’

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, সরকার স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী এমন পরিস্থিতিতে পালন করছে যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে মানুষের বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে রেখেছে। ফলে কারাগারে লেখক মোস্তাকের মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, যথাসময়ে চিকিৎসা না পেয়ে ইউপিডিএফ নেতা পুলক জ্যোতি চাকমাকে খাগড়াছড়ি কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কার্টুনিস্ট কিশোরকে আটক হওয়ার পর ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে প্রতিবাদী কন্ঠকে রুদ্ধ করে রাখতে শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত অপকৌশল প্রয়োগ করছে। সে কারণে গত ৮ মার্চ খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা প্রদান করেছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নিশ্চিহ্ন করতে সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।

তিনি, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে পুলক জ্যোতি চাকমা, লেখক মুশতাক হত্যার ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচার দাবিসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত আহ্বান জানান।

বক্তারা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাত ছাত্র নেতার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি ও রাষ্ট্রীয় হেফাজতে লেখক মুশতাকের হত্যা ও কার্টুনিস্ট কিশোরের নির্যাতনের বিচারের দাবি জানান।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More