আগর চাষে ঝুকঁছেন বাঘাইছড়ির সাধারণ মানুষ

0

 

বাঘাইছড়ি(রাঙ্গামাটি)প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আগর চাষ বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন আগর বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। এই এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে আগর গাছে সৃগন্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ আগর চাষে ঝুঁকছেন বলে জানা গেছে ।

বনবিভাগ ও আগর চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে কাচালং আর্যপুর বনবিহারে দুই একর জমিতে সাড়ে তিন হাজার আগর চারা রোপন করা হয়। এখানে ১৬ বছর পর আগর গাছ থেকে প্রাকৃতিকভাবে সুগন্ধ পাওয়া গেছে। ২০১০ সালে থেকে ওই বাগানটি  ক্রেতারা কেনার জন্য ভিড় করে। অনেক দরকষাকষির পর ২০১২ সালে তিন শতাধিক আগর গাছ বিক্রি করা হয়। এতে একটি আগর গাছ ১৯ হাজার করে তিন শতাধিক গাছ ৫৭ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির আঙিনায় লাগানো দুই শতাধিক আগর গাছ বিক্রি হয়ে গেছে। তার পর থেকে এলাকায় আগর গাছ বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়লে আগর চাষে হিড়িক পড়ে।  গত বছর পাঁচ হাজার একর জমিতে আগর চাষ করা হয়। এবছর তা বাড়িয়ে ১০ হাজার একরে দাঁড়ায়। আগামী বছর আরও বাড়বে বলে সংশি¬ষ্টরা ধারণা করছেন।

সম্প্রতি বাঘাইছড়ি, সারোয়াতলী, মারিশ্যা ও খেদারমারা ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, নানা বয়সের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন টিলায় আগর চারা রোপন করছেন। তাঁরা সেগুন, আম, কাঠাল, কলা ও লিচু বাগান বাদ দিয়ে আগর বাগান করছেন।

বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ের মাটি আগর চাষের উপযোগী ও আবহাওয়া দিক দিয়েও আগর চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান । ২০০৮ সালে বনবিভাগ উপজেলার বাঘাইহাটে ৭৫ একর জমিতে পরীক্ষামূলক আগর চাষ করে। পাহাড়ের আগরের কাঠ খুবই সুগন্ধযুক্ত। এসব সুগন্ধি দেশ-বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এর নির্যাস থেকে অত্যন্ত মূল্যবান সুগন্ধি ও তেল পাওয়া যায়। সেই সুগন্ধি ও তেল দিয়ে আতর, আগরবাতি, বোডি স্প্রে, সেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পণ্য তৈরি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, উপজেলায় আগর চাষ সর্বত্র  ছড়িয়ে পড়েছে। আগর চাষ বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন জমির দামও বাড়ছে। নিজস্ব জমি ছাড়াও এখন খাস ও সংরক্ষিত বন দখল করে আগর চাষ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আগর চাষে ঝুঁকলেও সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগে নেই বলে জানা গেছে।

আগর চাষি উপসম চাকমা, সুমন চাকমা, অজয় কান্তি চাকমা বলেন, অন্যান্য বাগানের তুলনায় আগর বাগানের খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি। তাছাড়া এই এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে আগর গাছে সুগন্ধি সৃষ্টি হয়। আগর বাগানে লাভ হওয়ায় এলাকায় হাজার হাজার লোকে আগর চাষ করছেন। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন আগর চাষ বেড়েছে। এখন এলাকার লোকজন আগর গাছ বিক্রি করে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করার স্বপ্ন দেখছেন।

আর্যপুর বনবিহার কমিটির সভাপতি অনন্ত সিং চাকমা বলেন, আমরা তিন শতাধিক আগর গাছ বিক্রি করেছি। একটা আগর গাছের মূল্য ১৯ হাজার করে। ক্রেতারা আমাদের আগর গাছে সুগন্ধির সন্ধান পেয়েছে। সেজন্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। আমাদের ধারণা তাঁরা পাঁচগুন দাম পাবে।

মারিশ্যা বন বিটের বন কর্মকর্তা মো: এস এম সাত্তার বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবছর প্রায় হাজার আগর চারা বিতরণ করেছি। গত দু’বছরে ১৫ হাজার একরের বেশি জমিতে আগর চাষ করা হয়েছে।  যারা আগর চাষ করছে তাঁরা নিজেরাই পরিপক্ক বীজ সংগ্রহ করে নার্সারি করেন। পরে চারার বয়স নয় মাস হলে বাগানে লাগান। আমরা আগর চাষিদের উৎসাহিত করছি।

উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: এস. এম কায়ছার বলেন, গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন আগর চাষ বেড়েছে। আমরা বাঘাইহাট এলাকায় পরীক্ষামূলক ৭০ একর জমিতে আগর চাষ করেছি। পাহাড়ে আগর চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। শুনেছি বাঘাইছড়িতে একটি বাগানের তিন শতাধিক আগর গাছ বিক্রি হয়েছে। সেখানে নাকি বিভিন্ন আতর, আগরবাতি তৈরির সুগন্ধি তেল পাওয়া গেছে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More