স্মরণ
আজ শহীদ ভরদ্বাজ মুণির আত্মবলিদানের ২৮ বছর
সিএইচটি নিউজ ডেস্ক ।। আজ ১৩ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুণির আত্মবলিদানের ২৮ বছর পূর্ণ হল। আজকের দিনটি নব্বইয়ের দশকে সূচিত গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামে রক্তে লেখা একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৯২ সালের এই দিনে সেনা-সেটলার ও সেনাসৃষ্ট গুণ্ডাদের যৌথ আক্রমণে দীঘিনালার মাইনি ব্রিজের সন্নিকটে শহীদ হন ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরদ্বাজ মুণি চাকমা। এ হামলায় প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ আহত হয়েছিলেন। গুরুতর জখম হয়েছিলেন ডজনের অধিক। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বয়স্ক পুরুষ ও নারী।
দীঘিনালা তখন ছিল নরকতুল্য ফৌজী শাসনে পিষ্ট, স্থানীয় দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল-সেনা চর আর সেটলারদের দৌরাত্ম্যে জনজীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিসহ। এমনি সময়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও পাহাড়ি গণপরিষদ (পিজিপি) ডাক দেয় ছাত্র-গণসমাবেশের। যা আক্ষরিক অর্থে মাইনি উপত্যকায় দীর্ঘদিনের নিষ্পেষিত ছাত্র-জনতার চেতনায় বিদ্যুতস্পৃষ্ট করে প্রতিবাদী জোয়ার বইয়ে দেয়। মাইনি উপত্যকায় ছাত্র জনতার ঢল নামে। শত শত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, পিসিপি ও পাহাড়ি গণপরিষদের নেতা-কর্মী আহূত ছাত্র-গণসমাবেশে যোগ দিতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। কোথাও সারিবদ্ধভাবে আবার কোথাও খণ্ড খণ্ড মিছিল আকারে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সমাবেশে অংশ নিতে এমনি একটি দলের সহযাত্রী হয়ে সেদিন ৭০ বছরের বয়োবৃদ্ধ ভরদ্বাজ মুণিও রাজপথে নেমেছিলেন। কিন্তু সেনা-সেটলার ও সেনাসৃষ্ট সন্ত্রাসী গুণ্ডাদের যৌথ হামলায় মাইনি ব্রিজের সন্নিকটে তিনি শহীদ হন। হামলায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন বয়স্ক নারীসহ আরও অর্ধ শতাধিক লোক। বিশেষ করে দৌঁড়াতে না পারার কারণে বয়স্করাই বেশি হামলার শিকার হয়েছিলেন। দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে বাঁচতে অনেকে স্রোতস্বিনী মাইনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন।
এ ঘটনার পর দীঘিনালা আর আগের মত থাকেনি। কায়েমী স্বার্থবাদী সেনাচক্র, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল বেঈমান ও সেটলার সর্দারদের সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে যায়। গণজোয়ারের মুখে দুর্বৃত্ত দালালরা পিছু হটে। দীঘিনালা এক শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে। নব্বইয়ের দশকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভরদ্বাজ মুণি’র আত্মবলিদান প্রতিরোধের চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে!
আজকের এই দিনটিতে আমরা শহীদ ভরদ্বাজ মুণি’র প্রতি গভীর সম্মান জানাই! তাঁর আত্মবলিদানের ফলে সে সময় দীঘিনালায় সেনাচক্র-দালাল-বেঈমানদের পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছিল। দুর্দশাগ্রস্ত জাতিকে মুক্ত করতে আজ প্রয়োজন ভরদ্বাজ মুণি’র চেতনায় উজ্জীবিত আত্মবলিদানে নির্ভীক শত শত তরুণের। ৭০ বছরের বৃদ্ধ যে সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সময়ের প্রয়োজনে বীরত্বের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে বর্তমান তরুণ-যুবা থেকেও আবির্ভূত হবে অনেক দেশপ্রেমিক।