‘আর্মিরা মিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়ে আমার নখ তুলে ফেলার চেষ্টা করে’: রিয়েল ত্রিপুরা

0

সিএইচটিনিউজ.কম

রিয়েল ত্রিপুরা
রিয়েল ত্রিপুরা

রিয়েল ত্রিপুরা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার দপ্তর সম্পাদক। এ বছর খাগড়াছড়ি কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। গোমতী বি কে উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় পিসিপির সাথে জড়িয়ে পড়েন। গত ৬ আগস্ট গুইমারায় অন্যায়ভাবে আটক দুই কিশোরের মুক্তির দাবিতে সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সময় সেনা সদস্যরা তাকে বিনা ওয়ারেন্টে অন্যায়ভাবে আটক করে। এরপর তাকে সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে পিসিপি রবিবার সড়ক অবরোধের ডাক দিলে সেনারা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ছাড়া পাওয়ার পর রিয়েল ত্রিপুরা সিএইচটিনিউজ.কমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তার উপর সেনাদের বর্বর নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। আমরা পাঠকদের জন্য নিচে তার বক্তব্য হুবহু প্রকাশ করছি।
———-

রিয়েল ত্রিপুরা: আমি ৯ম শ্রেণী থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে কাজ করছি। প্রথমে আমি মাটিরাঙ্গায় কাজ করতাম। এরপর খাগড়াছড়ি কলেজে ভর্তি হলে খাগড়াছড়িতে কাজ করে যাচ্ছি।

আটক হওয়া
গত ৬ আগস্ট গুইমারা স্কুলের এক ছাত্র সহ ২ জনকে সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ৮ আগস্ট গুইমারায় বিক্ষোভ মিছিল সফল করতে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার  তনয়  ও আমি গুইমারা যাই। বেলা ২টায় আমরা মিছিল শুরু করি। মিছিলটি বাজার ঘুরে সাংবাদিক প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যের পর আমি বক্তব্য দিতে শুরু করি। ৪/৫ মিনিট বক্তব্য দেয়ার পর সেনাবাহিনী অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাকে ২ জন সেনা সদস্য দুই হাতে ধরে ফেলে। আমি তখন বলি, ‘কি করছেন আপনারা।’ তখন তারা বলে ‘চুপ বেটা’! এরপর তারা আমাকে মারতে শুরু করে। আমি পালানোর চেষ্টা করি। তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আমার মাথা ফেটে যায় এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এরপর তারা আমার মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে। বেশ খানিক্ষণ পর আমি চোখ খুলতে পারি। তারা গাড়িতে করে আমাকে মিছিলের ব্যানার দিয়ে চোখ বেঁধে সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে যায়। নিয়ে যাবার সময়ও গাড়ির ভিতর আমাকে বুটজুতার লাথি ও মারধর করা হয়।

সিন্দুকছড়ি জোনে নির্যাতন
সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে গিয়ে বারান্দায় ৫ মিনিট বসিয়ে রেখে পরে ক্যাপ্টেন আহসানুল ইসলাম-এর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ‘তোমার নাম কি’, ‘তোমার বাড়ি কোথায়’, ‘গুইমারা কি করতে এসেছ’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করতে থাকে। উত্তরে আমি বলি মিছিল করতে গুইমারায় এসেছি। তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় মিছিলে কি কথা বলছ? আমি বলি স্কুল ছাত্রসহ ২ জনকে মুক্তির দাবিতে বক্তব্য দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘তোমরা তো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিছিল করেছো?’ আমি বলি ‘সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তো হবেই। কারণ ২ জনকে তো আপনারা ধরেছেন। সেজন্য আমরা ব্যানারে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটকের কথা লিখেছি।’

এরপর ২ জন গোয়েন্দা সংস্থার লোকের হাতে আমাকে তুলে দেওয়া হয় এবং আমার উপর মারধর শুরু করা হয়। এমনভাবে মারছে যা কল্পনারও বাইরে। ১০/১৫ মিনিট মারার পর আবার রুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। ‘তোমার অস্ত্র কোথায়? তোমাদের নেতা কোথায় থাকে বের করে দাও, নাম বল’ ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন আমি বলি, ‘নেতারাতো সবাই খাগড়াছড়িতে থাকে।’

এরপর ওরা (সেনা সদস্যরা) ল্যাপটপ বের করে মিছিল ও নেতাদের ছবি দেখায়। এতে দেখলাম আমার ছবি গোল চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। ল্যাপটপের ছবি দেখিয়ে বলে, ‘এরা কারা।’ আমি বলি ‘এটাতো আমি।’ কোন জায়গায়, সেখানে কি করছি ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। আমি বলি ‘ব্যানারেতো সব দেখতে পাচ্ছেন, কেন জিজ্ঞাসা করছেন।’ এটা বলার পর ‘বেশি কথা বল’ এমন ধমক দিয়ে আবার মারধর করা হয়। এ সময় অনেক জনের নাম তারা জিজ্ঞাসা করেছে। অমল ত্রিপুরার নাম জিজ্ঞাসা করেছে (তাকেও গোল চিহ্ন দিয়ে মার্কিং করে রাখা হয়েছে)। তার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বলি ওকে চেহারায় চিনি কিন্তু নাম জানি না। এরপর আবার মারতে শুরু করে।

এরপর গুইমারার রাবার বাগানের কর্মশালার একটি ছবি বের করে এটা কোন জায়গায় জিজ্ঞাসা করে। আমি জানিনা বলে উত্তর দিই। তারপর আমার মোবাইলটা নিয়ে আমার প্রোফাইলের ছবির সাথে তাদের কাছে থাকা ছবিটি হুবহু মিলে যায়। এরপর আবার মাধধর করা হয়। এভাবে মারতে মারতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরে একটা বারান্দায় বেঞ্চিতে বসিয়ে বন্দুক তাক করে ‘গুলি করবো, মেরে ফেলবো, গর্তে পুড়ে ফেলবো’ (এর আগেও নাকি ২/৩ জন পাহাড়িকে তারা মেরে ফেলেছে বলে তারা জানায়) ইত্যাদি বলে ভয় দেখাতে থাকে। আমি একটু ভয় পেয়ে যাই। তারপরও মরলে মরবো, মানুষ মাত্রই মরণশীল এই দৃঢ় মনোবল নিয়ে থাকি।

এরপর সেনারা আমার দুই হাত রশি দিয়ে উপরে বেধে ঝুলিয়ে রেখে চিকন চিকন সূঁচ (অফিস পিনের মতো) দিয়ে আমার গায়ে ঢুকাতে থাকে। এছাড়া মিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়ে আমার নখ তুলে ফেলার চেষ্টা করে। হাতুড়ি দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় মারধর করে। আর তাদের হাতে একটা বড় লাঠি আছে (যেটা তাদের তৈরি করা) ওটা দিয়ে শুধু পাছায় আর কাঁধে মারধর করে। মাঝে মাঝে মাথায়ও মারে। যখন আমি ব্যাথায় চিৎকার করি তখন মুখে ওই লাঠিটা ঢুকিয়ে দেয়। মারতে মারতে ‘তোমার অস্ত্র কোথায়’ জিজ্ঞাসা করে। যখন আমি বার বার একই কথা বলে যাচ্ছি তখন সেনারা আমাকে জিহ্বা বের করতে বলে। আমি যখন জিহ্বা বের করি তখন একটা যন্ত্র দিয়ে জিহ্বা টেনে দেয়, যা খুবই কষ্টকর। এ সময় ব্যথায় যখন চিৎকার করি তখন মুখ চেপে ধরে হা করিয়ে মুখে লাঠিটা ঢুকিয়ে দেয় এবং বলে ‘একদম শেষ করে ফেলবো’।

অস্ত্র ধরতে শিখি নাই, শ্লোগান দিতে শিখেছি
এসময় যারা ডিউটিতে থাকে তারাও পিছন দিক থেকে বন্দুকের বাট দিয়ে মারধর করে। এর ফলে আমি ডান কাঁধে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। এখন ডান হাতটা ঠিক মতো নাড়াচাড়া করতে পারছি না।

তখন তাদেরকে আমি বলি, ‘দেখুন আমি কিন্তু ছাত্র। আপনাদের ছেলেও ছাত্র থাকতে পারে। আমি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ করি। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতারা আমাকে অস্ত্র ধরতে শেখায়নি। আমি বক্তব্য দিতে শিখেছি, মিছিল করতে শিখেছি, শ্লোগান দিতে শিখেছি। আমি যেহেতু দপ্তর সম্পাদক, তাই মাঝে মাঝে প্রেস রিলিজ দিতে শিখেছি। অস্ত্র ধরতে শিখি নাই। আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, আমি সেটা বলতে পারবো না। যদি বলতে হয় তাহলে তা মিথ্যা বলতে হবে। কিন্তু মিথ্যা বলা আমার পছন্দ নয়, আমি মিথ্যা কথা বলতে রাজী নই। সুতরাং আমাকে মেরে ফেলতে পারেন।’

আমি চাঁদাবাজ না
এরপর তারা (সেনারা) ‘কিভাবে বলতে হয় দেখি’ বলে পা দুটো বেঁধে নীচে মাথা ও উপরে পা ঝুলিয়ে ঘুরাতে থাকে। তখন মাথা ঘুরে এমন অবস্থা হয়েছে যে, মনে হয়েছে মরে গেলে ভালো হতো। একবার চিৎকার দিয়ে বলেছি, ‘আপনারা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলেন, এভাবে কষ্ট দেবেন না।’ এছাড়া তারা বালতি দিয়ে মুখে পানি ঢেলে দেয়।

এমনকি তারা আমার অন্ধকোষেও আঘাত করে বলে ’সব খুলে বল’। তখন আমি বলি, ‘আমি আর কি বলবো।’ তখন ওরা বলে, ‘তোদের অস্ত্র কোথায়? তোরা নাকি গুইমারাতে মাসে চার লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি কর। সেসব টাকা কোথায়?’ আমি বলি, ‘আমি চাঁদাবাজও না, সন্ত্রাসীও না আপনারাও এটা জানেন। আপনারা অযথা আমাকে ফাসাচ্ছেন। প্রয়োজনে আমাকে গুলি করে মারেন, তবুও আমি এটা বলতে পারবো না।’

এভাবে মাঝে মাঝে উপরের দিকে মাথা, মাঝে মাঝে পা উপরে মাথা নীচের দিকে রেখে ঝুলিয়ে নির্যাতন করতে করতে রাত আনুমানিক আড়াইটা বেজে যায়। এরপরও যখন কোন কিছু স্বীকার করছি না তখন ওরা সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডারের সাথে কি যেন মিটিং করে। এরপর আমাকে ঝুলানো থেকে নামানো হয়। এ সময় আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে আমাকে জোন কমান্ডারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

জোন কমান্ডারের মশকরা ও প্রলোভন
জোন কমান্ডার আমাকে ভদ্রভাবে বসতে বলেন। তিনি আমার কাছ থেকে কি অবস্থা জানতে চাইলে আমি বলি, ‘আঙ্কেল, আপনিতো দেখতেছেন কি অবস্থা।’ তখন তিনি বলেন, ‘ভালো তো তাই না?’ আমি বলি, ‘আপনারাতো ভালো রাখছেন না। আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা মশকরা করছেন নাকি।’

এরপর তিনি নরম সুরে বলেন, ‘বাবা তুমি কি কাজটি করতেছ এটা তোমার ভবিষ্যতের জন্য ভালো কাজ না। তোমার ভবিষ্যত অন্ধকার। তুমি ভাল হয়ে যাও।’ এর আগে অবশ্য তিনি আমার পরিচয় নিয়ে নেন।

তিনি আরো বলেন, ‘তুমিতো শিক্ষিত ছেলে। তোমাকে টাকা দেবো, ভার্সিটিতে পড়াবো, ভার্সিটিতে যদি না হয় অনার্সে পড়াবো। তোমার শিক্ষা জীবন আমি চালাবো।’ এরপর একজনকে টাকার বান্ডিল আনতে বলেন এবং টাকার বান্ডিল দেখিয়ে আমাকে বলেন, ‘তোমাকে টাকা দেবো। তুমি আমাদের এখানে থাকো, সেখানে আর যেয়ো না।’

এ সময় পাশ থেকে এক ক্যাপ্টেন বলে ওঠে, ‘স্যার আমরা ওকে মারবো না। ওকে গেট থেকে বের হলে সন্তু লারমার জেএসএসকে দিয়ে মারবো।’ তখন আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম। আসলে তার কথা সত্যি হবে কি-না তাই।

এভাবে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে কথা বলার পর ভাত খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। আমি ভাত খাবো না বলে দিই। এরপর ওরা ২ পিচ রুই মাছ দিয়ে ভাত খেতে দেয়। কিন্তু সিদ্ধ চালের ভাত হওয়ায় গন্ধে ভাতগুলো খাওয়া যায় না। তারপরও কিছু পরিমাণ ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম। তারা আমাকে পানি খেতে দেয়। এরপর দক্ষিণ সাইডে ওদের কমিউনিটি সেন্টার নামে একটি ঘরে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বারান্দায় রাত আনুমানিক ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময় গায়ের ব্যথায় মশার কামড় পর্যন্ত টের পাইনি।

‘ভাই, একটু খবরটা দেখান’
এরপর ভোর ৬টার দিকে একজন সেনা সদস্য এসে বাধন খুলে দেয়। খুলে দেয়ার পর পাশের একটি  ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তখন আমারতো মাথা ঘুরাচ্ছে, কথা বলতেও আর ইচ্ছে হচ্ছিলো না। কিন্তু এরা আমাকে নানা প্রশ্ন করে। এ সময় আরেকজন এসে বলে, ‘ওকে আর বিরক্ত করো না।’ সেখানে তারা আমাকে টিভি দেখায়। দেখেছি ওরা খবর না দেখে শুধু বাংলা ছবি দেখে দেখে সময় কাটায়। আমি বললাম, ‘ভাই, একটু খবরটা দেখান। তারপর আমাকে খবর দেখানো হলো।’ সকাল ৭টায় দুটো পরোটা ও ডাল দিয়ে নাস্তা খেতে দেওয়া হয়। এরপর পানি খেয়ে একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দেয়। এর আধঘন্টা পর আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তারা বার বার একই কথা (অস্ত্র কোথায়?…. ইত্যাদি) জিজ্ঞাসা করে। আমিও একই উত্তর দিয়ে যাই।

এরপর একটি আমগাছের নীচে নিয়ে যায়। সেখানে আবার মারতে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে আবার ২/৩ মিনিট রেস্ট দিয়ে আবার মারধর করে। এভাবে প্রায় সকাল ১১টা বেজে যায়।

তারা অনেক  ভয় পেয়েছে
জোন কমান্ডার আমাকে বলেন, ‘বাবা তোমার কিচ্ছু হবে না। তোমাকে জেলেও দেবো না। তুমি শুধু একটা সহযোগিতা করো।’ আমি বলি, ‘আংকেল কি সহযোগিতা করতে হবে?’ এরপর তিনি হেসে বলেন, ‘তোমরা গত মাসের ২ তারিখে যে কর্মশালা করেছো, সে জায়গটা একটু দেখিয়ে দিতে হবে।’ আমি বলি ‘জায়গাটা একটু দুর্গম।’ তিনি বলেন, ‘দুর্গম হলেও আমার লোকজন যাবে।’

তখন দুপুর ১টা বাজে। একটা গাড়ি এসেছে। আমাকে গাড়িতে উঠানো হলো। এ সময় একজন ক্যাপ্টেন বলেন, ‘তোমার কিছু হবে না, নিশ্চিন্তে থাকতে পার। জিডি করেই তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে তুমি সব সময় আমাকে রিপোর্ট দেবে, আমি তোমাকে টাকা দেবো।’ এ সময় গাড়িতে যেসব সেনা সদস্যরা ছিল তারা সবাই নতুন মুখ। আমাকে যারা মারধর, নির্যাতন চালিয়েছে তারা কেউ নেই। এরা আবার ধমকও দিতে চায়।

আমি আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমাকে যখন মারধর করা হয় তখন সেনা সদস্যরা আমাদের জুম্ম মেয়েদেরকে নিয়ে খুবই অশ্লীল ভাষা বলতো। যা সহ্য করার নয়। বলতো ‘মেয়েদের যদি ধরতে পারতাম তাহলে বুঝিয়ে দিতাম’ ইত্যাদি। আমি এ সময় তাদের কথায় প্রতিবাদ করেছি। বলেছি ‘আপনারা এক একজন দেশরক্ষী। এভাবে কথা বলছেন কেন?’ এটা বলার পর আমাকে আরো মারধর করেছে তারা।

আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে ৫/১০ মিনিট গুইমারা রিজিয়নে থামিয়ে মাটিরাঙ্গা জোনে নিয়ে যায়। মাটিরাঙ্গা জোন থেকে আরো এক গাড়ি সেনা যোগ দেয়। এই দুই গাড়ি মিলে যেখানে কর্মশালা হয় সেই রাবার বাগানে আমাকে নিয়ে যায়। তবে সেখান যাবার সময় তারা অনেক ভয় পেয়েছে বলে মনে হয়েছে। কেউ আগে যেতে চাচ্ছিল না। সেখানে গিয়ে ছবি, ভিডিও তোলার পর আমাকে  আবার মাটিরাঙ্গা জোনে নিয়ে যায়।

থানায় জিডি ও মুক্তি
এরপর গুইমারা রিজিয়ন থেকে একটা গাড়ি আসলে আমাকে গুইমারা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হাফছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উশ্যে প্রু মারমা উপস্থিত হলে জিডি লেখার কাজ শেষ হওয়ার পর চেয়ারম্যান ও আমার স্বাক্ষর রেখে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর চেয়ারম্যান উশ্যে প্রু মারমা মোটর সাইকেলে করে আমাকে খাগড়াছড়িতে পৌঁছে দেয়। খাগড়াছড়িতে পৌঁছে দেখি সহযোদ্ধারা আমার অপেক্ষায় রয়েছে এবং আমি পৌঁছা মাত্র শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে মিছিল করছে। এখন আমার সারা শরীর ব্যথা করে, মাথা ঘুরে। বসতে উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। #

দমন পীড়ন চালিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা যায় না।
—————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More