আলীকদমের পাহাড়গুলোতে কাউন চাষের অপার সম্ভাবনা
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ নিলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চিত্র এক নতুন রূপ পাবে। কৃষিপণ্য হিসেবে পাহাড় ও সমতলের মানুষের কাছে কাউন অত্যান্ত জনপ্রিয়। এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলী আহমেদ বলেন, কাউন একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পণ্য হলেও সরকারীভাবে চাষীদের মাঝে কাউন বীজ বিতরণ কিংবা কাউন চাষে চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ করা হয় না। প্রচারণার অভাবে স্থানীয় কৃষকরাও কাউন চাষের বিষয়ে তেমন অবহিত নন।
পার্বত্য আলীকদমের স্থানীয় জুমচাষী গরামনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পাহাড়ের জুম ধানের সাথে মিশ্রশস্য হিসেবে কাউন আবাদ করা হয়। বৈশাখের শুরুতে জুমে ধানবীজ বোনার সময় কাউনবীজ ছিটানো হয়। বৃষ্টির পাওয়ার সাথে সাথে কাউনবীজ গজিয়ে ওঠে। কাউন দেখতে অনেকটা সরষে দানার মতো। কাউন স্থানীয়দের কাছে ‘কৈন’ নামে পরিচিত। জুমিয়াদের কাছে এটি একপ্রকার ধান হিসেবে পরিচিত। কাউন গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা হয়ে থাকে। তিনি জানান, কাউন গাছ মাঝারি লম্বা, সবুজ রঙের পাতা, কান্ড শক্ত তাই সহজে নুয়ে পড়ে না। এর শীষ লম্বা, মোটা ও রোমশ প্রকৃতির হয়।
আলীকদম উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, প্রায় সবধরণের মাটিতেই কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল ফলন হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি) পর্যন্ত কাউনের বীজ বপন করা হয়। কাউনের বীজ ছিটিয়ে কিংবা সারিতে বোনা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে চারা পরিচর্যায় সুবিধার পাশাপাশি ফলনও বেশী পাওয়া যায়। বীজ বুননের সময় সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখতে হয়। তবে জুমচাষীরা পাহাড়ে জুমক্ষেতে সাধারণতঃ এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত কাউনের বীজ ছিটিয়ে আবাদ করেন। কাউন চাষের জমির মাটি ঝরঝরে করতে হয়। বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। প্রতিবিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে প্রায় ৩৫০ কেজি পর্যন্ত কাউন উৎপাদন করা যায়। ১৯৮৯ সালে ‘তিতাস জাত’ নামে কাউন বীজ কৃষি বিভাগ থেকে অনুমোদন লাভ করে। এ জাতটি রবি মৌসুমে ১১৫ দিনে এবং খরিপ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে।
পাহাড় ও সমতলের মানুষের কাছে কাউন একটি সুস্বাদু খাবার। অতিথি আপ্যায়নে, উৎসব-পার্বণে কাউনের পায়েশের বেশ প্রচলন আছে। বিস্কুট তৈরিতেও কাউন ব্যবহৃত হয়। কাউন একটি পারিবারিক আয়বর্ধনকমূলক চাষ। এটি পুষ্টির চাহিদা পূরণেও সহায়ক। বাণিজ্যিকভাবে কাউন উৎপাদন করা গেলে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
জুমচাষী স্বাধীন মনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি কাউন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কাউন উৎপাদন হয় না। জুমচাষে ধানের সাথে কাউনের মিশ্রচাষের ফলে আলাদা জমিরও প্রয়াজন হয় না। তাই খুব সহজেই কাউন চাষ করা যায়।