আলুটিলায় ৬৯৯.৯৮একর জমিতে ‘বিশেষ পর্যটন জোন’ গঠনের প্রস্তাব, উচ্ছেদ আতঙ্কে পাহাড়িরা

0

Alutlaখাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক খাগড়াছড়ি শহরের অনতিদূরে আলুটিলা নামক এলাকায় ৬৯৯.৯৮ একর জমি নিয়ে ‘আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন, খাগড়াছড়ি নামে অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে (যার স্মারক নং-০৫.৪২.৪৬৭০.০০৬.০০.০০.০১২.১৬.১২৯৬)। যার প্রেক্ষিতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে উক্ত এলাকায় যুগ যুগ ধরে বসবাসরত পাহাড়িরা নিজ জমি ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।

প্রস্তাবিত জমির মধ্যে মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন ২০৫ নং তৈকাতাং মৌজার ৬০০ একর, ২০৪ নং আলুটিলা মৌজার ৪ একর এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ২৬২ নং গোলাবাড়ী মৌজার ৯৫.৯৮ একর দেখানো হয়েছে।

উক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে গোলাবাড়ী মৌজায় অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবিত জমি বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে এবং সার্ভেয়ার কর্তৃক খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কাছে প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত ৯৫.৯৮ একর জমির মধ্যে ৮ একর মংসাইগ্য চৌধুরীর জমি ও ৮৭ একর খাস বা সরকারের মালিকানাধীন দেখানো হয়েছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবিত জমির উপর তদন্ত প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে মাটিরাঙ্গা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একটি নথিতে আলুটিলা  মৌজার ৬৩৬ নং দাগের ও তৈকাতাং মৌজার ৩ নং দাগের সমস্ত জমিসহ  প্রস্তাবিত ৬০৪ একর খাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তৈকাতাং মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে বর্তমানে ৩টি গ্রামে ৩৯৭টি পরিবারের মোট ১,৬৪২ জন পাহাড়ি বসবাস করছেন। এছাড়া এই গ্রামগুলোতে রয়েছে ৫টি হিন্দু মন্দির, ৩টি শ্মশান, ব্র্যাক পরিচালিত স্কুল ১টি, ইউনিসেফ পরিচালিত স্কুল ৪টি ও জাবারাং (এনজিও) পরিচালিত স্কুল ১টি।

আলুটিলা মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে ৮টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত। এসব গ্রামে বাস করছেন ১১৩টি পরিবারের ৪৭১ জন সদস্য। এখানে ২টি হিন্দু মন্দির, ১টি গীর্জা, ১টি কমিউনিটি সেন্টার, ১টি সরকারী স্কুলসহ ৬টি প্রাইমারী স্কুল (হৃদয় মেম্বার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুনর্বাসন বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্র্যাক স্কুল ২, ইউনিসেফ স্কুল ২) ও ৩টি শ্মশান রয়েছে।

গোলাবাড়ী মৌজায় অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবিত জমিতে একটি গ্রামের ৮ পরিবারের ৪০ জন পাহাড়ির বসবাস রয়েছে। এছাড়া এখানে ‘আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বিহার’ নামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনালয়, খৃষ্টানদের ১টি গীর্জা ও ১টি শ্মশানেরও অবস্থিতি আছে।

এছাড়া উক্ত তিন মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে ৩৮ ব্যক্তি ও সমিতির নামে শত শত একরের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান এবং ঔষধী গাছ রয়েছে। এইসব বাগান থেকে তারা বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে তাদের পারিবারে ও সমাজে সমৃদ্ধি আনয়ন করছেন। পাহাড়ি বাঙালি মিশ্রিত জমির মালিকদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, তার স্ত্রী ক্রাইচাউ মারমা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল আলম, কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তাসহ অনেকে।

প্রস্তাবিত উক্ত জমিতে আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন গঠন করা হলে দুটি উপজেলার তিনটি মৌজায় ১২টি গ্রামের ৫১৮টি পরিবারের ২,১৫৩ জন পাহাড়ি (প্রধানত ত্রিপুরা জাতি অধ্যুষিত এই বসতিগুলো শত বছরের পুরোনো এবং তারা জীবিকার জন্য মুলতঃ জুম চাষের উপর নির্ভরশীল) উচ্ছেদের শিকার হবেন। ফলে তারা এখন নিজ জমি ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।

এদিকে, উক্ত প্রস্তাবনা ও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
———————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More