আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমার ভাবনা-উৎপল খীসা

0

সিএইচটিনিউজ.কম

[উৎপল খীসা তার ফেসবুক ওয়ালে এই লেখাটি লিখেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য তার এই লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ  হ্ওয়ায় এখানে হুবহু ছাপানো হলো। -সম্পাদক মন্ডলী।]

 ১। শাসক শ্রেণি বিশেষ করে সেনাদের মদদে ভোট গ্রহণ-প্রদান এবং ফলাফল ঘোষণায় এবারও ব্যাপক কারচুপি হতে পারে। তারা এটা করবে নিজেদের গোত্রীয় প্রাথিকে জিতিয়ে দেবার 10th parlament electionজন্যে। কারণ তা করতে না পারলে অর্থাৎ অন্য প্রাথিরা বিজয়ী হলে এই গোষ্ঠীর স্বার্থ কায়েম করার প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্থ হবে। তারা সেটা কখনো চায়বে না- জুম্ম বা জাতীয় স্বার্থ হাজারবার বিপন্ন হলেও।

২। শাসক শ্রেণির প্রধান লক্ষ্য থাকে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের মত অস্থিতিশীল সামরিক শাসন অধিষ্ঠিত এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রযোজ্য। এই জন্যে তাদের কাছে নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল- কোনটিই মুখ্য বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা প্রধানত বিবেচনা করবে- কে বাঙালী, তারপরে তারা দেখবে- কে তাদের কথা বেশি শুনবে এবং তাদের কথামত কাজ করবে অর্থাৎ স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে- ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই যে যাই বলুক, আমি মনে করি, এবারের নির্বাচনে ইউপিডিএফ, জে এস এস (এম এন লারমা) ও জে এস এস- কে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। অন্য প্রাথির চেয়ে এই দল সমুহের প্রাথিরা অনেক বেশি ভোট পেলেও ফলাফল তাদের পক্ষে না যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকছে। এটা এবার বেশি প্রকট হয়েছে- দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিএনপি এবং অন্যরা নির্বাচনে অংশ না নেবার কারণে। যেহেতু এতে করে কুশীলবদের মনিটর করবার ভিত্তি অনেক দুর্বল রয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায়, আমাদের জুম্মদের (দল, প্রাথি, কর্মী, এজেন্ট, পোলিং অফিসার ইত্যাদি) উচিত হবে- সবোচ্চ শক্তি নিয়োগ করা- যাতে করে ভোটের ফলাফল কেউ লুট করতে না পারে। ফলাফল গণনা হতে শুরু করে প্রকাশ বা ঘোষণা করা পর্যন্ত – সব কিছুতেই তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফল কপি স্ব স্ব প্রাথির এজেন্টদের মাধ্যমে প্রাথিদের সংগ্রহ করতে হবে। কপি পাওয়া না গেলে মোবাইলে ছবি তুলে রাখতে হবে। কোন অবস্থায় রণে ভঙ্গ দেয়া চলবে না।
৩। বিএন পি’র সমর্থকরা দেশের অন্যান্য এলাকায় ভোট দানে বিরত থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেকেই ভোট দেবে। তারা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যে দলেরই সমর্থক হন না কেন- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তারা তাদের একক প্রাথিকেই ভোট দিতে যাচ্ছে। এই লক্ষে যা করবার তা কিন্তু ভেতরে ভেতরে হতে চলেছে।
৪। জুম্মদের ভোট ৯৯% কাস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে- শাসক শ্রেণি ও তাদের সাগরেট সাম্প্রদায়িক বাঙ্গালীরা কিন্তু যেভাবে হোক তাই করার চেষ্টা করবে। এতে করে দেশ বিদেশের শান্তিপ্রিয় বাঙালী,বিশ্ববাসী আবারো ধোকা খাবে।
৫। কোন ভোট কেন্দ্রকেই গুরুত্বের দিক থেকে খাট করে দেখা যাবে না। সে জুম্ম অধ্যুষিত কেন্দ্র হোক বা বাঙালী অধ্যুষিত কেন্দ্র হোক। ভোট গ্রহন-প্রদানের সার্বিক প্রক্রিয়া নজর দারি করতে হবে- ইউপিদিএফ, জে এস এস (এম এন লারমা) ও জে এস এস’কে।
৬। অতীতের মত এবারো জুম্ম সুবিধেবাদিরা খেল দেখাবে। আর্থিক সুবিধের জন্যে তারা শাসক শ্রেণির পক্ষে লেজুরবৃত্তি করবে। আমাদের রাজনৈতিক দলসমুহের সমস্যা হল এদের সমাজে চিহ্নিত করতে না পারা। এত বছর আন্দোলন করেও এরাই এখনো আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী মুরুব্বী, জনদরদি নেতা সেজে রয়েছেন। এদের কারনে এবারো আমাদের পস্তানোর সম্ভাবনা থাকছে।
৭। আমি আগেও বলেছি, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতে এই ধরণের ভোটের আয়োজন নিয়ে আশান্বিত হবার তেমন সুযোগ নেই। তারপরও বলব- স্ট্রাটেজিক কারণে আমাদের দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা যুক্তিযুক্ত। তদুপরি, এই নির্বাচনে আমাদের জুম্ম রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রাথি দাঁড়িয়ে দিয়ে বিএনপিসহ অপরাপর দল গুলোর মত দায়িত্বহীন অগণতান্ত্রিক ভুমিকায় অবরতিরন হয়নি। এতে করে আর যাই হোক, ফাঁকা মাঠে গোল দেবার সুযোগ দীপঙ্কর, বীর বাহাদুর প্রভৃতি জুম্ম লেবাসধারী বাঙালী বাবুদের আর থাকল না। এক হিসেবে দেখতে গেলে এটা কিন্ত নেহায়েত কম কিছু নয়।
৮। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি সহ উল্লেখিত বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী জোট বাধা দরকার। আমাদের সামনে এখনও সে সুযোগ আছে। আমি মনে করি, নিজেদের স্বার্থে আমাদের দলগুলোর তাই করা উচিত। অন্যথায় অযোগ্য সেতেলার- তথাকথিত জুম্ম বাঙালী প্রাথিদের কাছে আমাদের সুযোগ্য নেতাদের নাস্তানাবুদ হবার সম্ভাবনা শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি থাকছে কিন্তু… ।  কারণ এই লড়াইয়ে জিততে তারা বাহু বল, ক্ষমতার বল, অর্থ বল- সবই ব্যবহার করতে চাইবে। এটা মোকাবেলা করবার জন্যে দরকার শক্তিশালী জুম্ম জাতীয় ঐক্য। এটা আমাদের নেত্রিত্বকে অনুধাবন করতে হবে।
২।১।২০১৩

সৌজন্যে: ফেসবুক

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More