ইউপিডিএফ’র তিনদিন ব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন : খাগড়াছড়ি ও মহালছড়িতে শিশু র‌্যালি অনুষ্ঠিত

0
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচি নানা আনুষ্ঠানমালার মধ্যে দিয়ে আজ ২৬ ডিসেম্বর সম্পন্ন হয়েছেঅনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল সমাবেশ, শিশু র‌্যালি, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, আলোচনা সভা, চা চক্র ও মতবিনিময় সভা, দর্শনীয় স্থানে দলীয় পতাকা উত্তোলন, ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো এবং দলীয় কার্যালয়ে বিপবী সংগীত বাজানো ইত্যাদিইউপিডিএফের তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচি পালনকালে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও আজ সকালে নান্যাচরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইউপিডিএফের টাঙানো পতাকা তুলে নিয়ে গেছেনান্যাচর উপজেলা সদরে ও যাত্রী ছাউনিতে টাঙানো দুটি পতাকা নান্যাচর জোনের এনসিও ওবায়দুল ও শাহাদাতের নেতৃত্বে তুলে নেয়া হয়
খাগড়াছড়ি :
 আজ ২৬ ডিসেম্বর বুধবার কর্মসূচির শেষ দিনে খাগড়াছড়ি ও মহালছড়িতে শিশুর্ যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। “উদ্ধত রাইফেল বেয়নেট সরিয়ে নাও,আমরাও চাই বিশ্বের শিশুদের মত অধিকার, ভয়-ভীতিহীন মুক্ত পরিবেশ, আমরা নিজ নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি নিয়ে বড় হতে চাই” এই শোগানে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর মাঠ থেকে আজ বুধবার সকাল ১১টায় শিশু র‌্যালিটি শুরু হয়ে নারাঙহিয়া, উপজেলা পরিষদ হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর মাঠে এসে শেষ হয়
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চার শতাধিক শিশু-কিশোর ইউপিডিএফ পতাকা হাতের্ যালিতে অংশগ্রহণ করেন র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোররা এ সময় “লঙ লিভ ইউপিডিএফ, ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইউপিডিএফকে শুভেচ্ছা স্বাগতম, বন্ধুরা এসো দলে দলে-সমবেত হই ইউপিডিএফর পতাকাতলে, আমরা বাঙালি নই, আমাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাও, পার্বত্য চট্টগ্রামকে মনুষ্য বাসযোগ্য কর, অপারেশন উত্তরণ তুলে নাও, আমাদের গড়ে উঠার পরিবেশ দাও, আমাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি বেদখল বন্ধ কর” ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন ও প্যাকার্ড বহন করে এবং লঙ লিভ ইউপিডিএফ শোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেপাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা র‌্যালি পরিচালনা করেন র‌্যালি চলাকালীন ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন
র‌্যালি শুরুর আগে সকাল ৯টায় স্বনির্ভরে অবস্থিত ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ও বিপ্লবী সঙ্গীত বাজানো হয়এরপর সকাল সাড়ে ৯টার সময় স্বনির্ভর মাঠে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ, সমাজ উন্নয়ন কমটি ও সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেনইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিট ও উপজেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন যথাক্রমে প্রদীপন খীসা, কালোপ্রিয় চাকমা ও রিকো চাকমা ও পুলক চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনে পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চন্দনী চাকমা ও মাদ্রী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জিকো মারমা ও নিকোলাস চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চন্দ্রদেব চাকমা, উমেশ চাকমা ও এলটন চাকমা, সমাজ উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অমিয় কান্তি চাকমা, সুনীতি বিকাশ চাকমা, দীপায়ন চাকমা ও ভুবনেশ্বর চাকমাএরপর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এবং শিশু-কিশোররা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেনপুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের স্মরণে অবনত মস্তকে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়এরপর ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসা সংপ্তি বক্তব্য রাখেনতিনি বলেন শিশুদেরকে অধিকার-সচেতন হয়ে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব নিতে পারে
মহালছড়ি
অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় মহালছড়িতে এক শিশু র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয় র‌্যালিটি মহালছড়ির সড়ক ও জনপদ বিভাগের মাঠ থেকে শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা প্রদণি করে বাবু পাড়ায় গিয়ে শেষ হয়এ সময় শিশুরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত শোগান দেয় র‌্যালিতে মহালছড়ি উপজেলার ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরাও অংশ গ্রহণ করেনউপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন শতাধিক শিশু-কিশোরর্ যালিতে অংশগ্রহণ করেন
বান্দরবান
১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলে আজ ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় বান্দরবান সদরের বালাঘাটায় ইউপিডিএফ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়সভার মূল থিম ছিল: “যে জাতি অন্য জাতিকে শোষণ-নিপীড়ন করে সে জাতি নিজেও স্বাধীন নয়”ইউপিডিএফ বান্দরবান জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এচিং মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য রূপন মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কাউখালী থানা শাখার সভাপতি অর্জন চাকমা ও বান্দরবান জেলার সদস্য এচিমং মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরুণ চাকমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা এমএম পারভেজ লেলিন
বক্তারা বলেন, দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে নাপার্বত্য চুক্তিকে অসম্পূর্ণ ও ভাওতাবাজিমূলক আখ্যায়িত করে তারা বলেন, পাহাড়ি জনগণের মৌলিক দাবিগুলো পূরণ না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কখনোই শান্তি আসবে না
বক্তারা বলেন, সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছেপার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনসহ ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছেকিছুদিন আগে রাঙামাটির কাউখালীতে এক মার্মা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছেএ ধরনের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছেবান্দরবানে পাহাড়িদের হাজার হাজার একর জায়গা বহিরাগতদের বেদখলে চলে গেছেপাহাড়িদের চেয়ে বহিরাগতরা সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়েছে
পাহাড় এবং সমতলের নিপীড়িত-শোষিত জনগণকে মুক্তির জন্য ঐক্যবন্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করে নেতারা বলেন, পাহাড় এবং সমতলের মিলিত সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংবিধান ও রাষ্ট্র গঠন সম্ভব, যেখানে দেশের সকল জাতি ও জাতিসত্তার জনগণ সমমর্যাদা ও সমঅধিকার ভোগ করবে
এছাড়া বাঘাইছড়ি, পানছড়ি, দিঘীনালাসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা সভা, চা-চক্র ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ইউপিডিএফের পতাকা উত্তোলন ও ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More