ইউপিডিএফ’র ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

0

ডেস্ক রিপোর্ট ।। আজ ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোডিক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)- এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে ১৯৯৮ সালের এদিন ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াকু তিন গণসংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন) এর যৌথ উদ্যোগে এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় ইউপিডিএফ। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকভাবে লড়াই সংগ্রাম সংগঠিত করছে।

গঠনলগ্ন থেকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইউপিডিএফকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক সরকার ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন ও নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ে লড়াই সংগ্রামে অবিচল রয়েছে ইউপিডিএফ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল, অন্যায় দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সব সময় সোচ্চার রয়েছে। শত দমন-পীড়নেও ইউপিডিএফ দমে যায়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি ইউপিডিএফ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনগণসহ সকল সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়েও সমানভাবে সক্রিয় রয়েছে। বিশ্বের সকল নিপীড়িত জনগণের সাথেও ইউপিডিএফ একাত্মতা প্রদর্শন করে থাকে।

বিগত ২০০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ ৬ দফা মৌলিক দাবিনামা, ১৬দফা সম্পুরক দাবিনামা ও ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই ভিত্তিতে ইউপিডিএফ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অবিচলভাবে।

ইউপিডিএফ’র মৌলিক দাবিনামাগুলো হচ্ছে – ১। পররাষ্ট্র, মূদ্রা, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প ব্যতীত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি আঞ্চলিক সংস্থার নিকট হস্তান্তরিত করার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম করা; ২। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংকো, বম, তনচংগ্যা, সাঁওতাল, গুর্খা, অহোমী ও রাখাইন জাতিসত্তাগুলোকে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত সকল জাতি ও জাতিসত্তা সমানাধিকার ও সমমর্যাদা ভোগ করবে এই নিশ্চয়তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা; ৩। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সংরক্ষিত আসনের (মহিলা আসনসহ) বিধান করা ও উক্ত আসনসমূহে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;  ৪। অপারেশন উত্তরণের নামে বলবৎ সেনাশাসন বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা; ৫। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলারদেরকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের স্ব স্ব জেলায় অথবা অন্য কোন সমতল জেলায় জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নতুন সেটলার অনুপ্রবেশ ও পুনর্বাসন বন্ধ করা ও ৬। প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে ইউপিডিএফ বদ্ধ পরিকর। যতই নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসুক না কেন ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কিছুতেই স্তব্ধ করা যাবে না– এমনই প্রত্যয় দলটির নেতা-কর্মীদের।

প্রতিষ্ঠার ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ইউপিডিএফ’র সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের জনগণকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়েছেন। 

পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বার্তায় তিনি প্রয়াত সহযোদ্ধাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপদানের লক্ষ্যে পার্টির নেতা-কর্মীদের আত্মোৎসর্গ করারও আহ্বান জানান।

সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত বার্তায় ইউপিডিএফ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ক’দিন আগে ২৪ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পূজগাঙে সরকারি মদদপুষ্ট সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হামলায় ২ ব্যক্তি নিহত হওয়া, ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরসহ সারাদেশে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা, অন্যায় ধরপাকড় ও অব্যাহত সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানান।

‘দমন-পীড়ন চালিয়ে চক্রান্ত করে দীর্ঘকাল ক্ষমতার গদি আঁকড়ে থাকা যায় না, এবার জনতার জেগে ওঠার পালা, ব্যালটের মাধ্যমে জনতা নিপীড়ন নির্যাতনের প্রত্যুত্তর দেবে’– বলে ইউপিডিএফ নেতা মন্তব্য করেছেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ থেকে একটি প্রচারপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ইউপিডিএফ এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বড় ধরনের কোন কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানা গেছে।


——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More