ইউপিডিএফের আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা, সন্তু গ্রুপের প্রতি ঐক্যের আহ্বান

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
আগামী ২৬ ডিসেম্বর পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছেদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবি শঙ্কর চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জনগণকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন সরকারকে উগ্রজাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক, গণবিরোধী ও ফ্যাসিস্ট আখ্যায়িত করে তারা বলেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান সংশোধন করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এ সরকারের সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় সাম্প্রতিক ১৪ ডিসেম্বর কবাখালি-বাঘাইছড়িতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা ও চিগোন মিলা চাকমার খুনের জন্য সেনাবাহিনীর মধ্যকার কায়েমী স্বার্থবাদী চক্রের উস্কানি ও সরকারের জাতি বিদ্বেষী নীতিকে দায়ি করে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সেনাবাহিনী ও সেটলার প্রত্যাহার করা না হলে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা বারে বারে ঘটতে থাকবেগত বছর ১৯, ২০ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সাজেক ও খাগড়াছড়িতে, এ বছর ১৭ ফেব্রুয়ারী লংগুদুতে এবং ১৭ এপ্রিল রামগড়ের বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে পরিচালিত হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না

সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত উক্ত বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় জনগণের অধিকার আদায়ের বৃহত্তর স্বার্থে জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের প্রতি ন্যুনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ অথবা যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাব দেন এবং বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য তাদেরকেই লাভবান করবে যারা পাহাড়ি জনগণের ওপর চিরকাল উগ্রজাতীয়তাবাদী শাসন শোষণ বলবৎ রাখতে চায়তারা বলেন, ‘আমরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাইতাই চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ১৪ বছরে আমাদের একের পর এক নেতা, কর্মী ও সমর্থক নিহত হওয়ার পরও আমরা মৈত্রীপূর্ণ চিত্তে জনসংহতি সমিতির প্রতি বার বার ঐক্য ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আসছিআমরা আশা করি জেএসএসের সন্তু গ্রুপ অচিরেই আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবে এবং ভ্রাতৃঘতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করবেনেতৃবৃন্দ আরো বলেন ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমিতির এম.এন লারমা গ্রুপ যেভাবে একে অন্যের অস্তিত্ব ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে স্বীকার করে কাজ করে যাচ্ছে, সেভাবে সন্তু গ্রুপ যদি এই দুই দলের সাথে পারস্পরিক সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করে ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে পাহাড়ি জনগণের মধ্যে সহজেই ঐক্য ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে

ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত নীতি ও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে সরকার পাহাড়ি জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, ভূমি বেদখল অব্যাহত রেখেছে ও ইউপিডিএফসহ সাধারণ জনগণের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছেতারা সরকারকে দমনমূলক নীতি পরিহার করে পাহাড়ি জনগণের ন্যায়সঙ্গত পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার মেনে নেয়ার আহ্বান জানানএছাড়া ইউপিডিএফের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা-হুলিয়া প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত ইউপিডিএফ সদস্যদের মুক্তি দেয়ারও তারা দাবি জানান

ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে মানবতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থের নিরিখে যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করেন, তবে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মারমুখী নীতি ও বিরোধী দলগুলোকে নিয়মতান্ত্রিক মত প্রকাশের অধিকার না দেয়ার তীব্র সমালোচনা করেনযুদ্ধাপরাধ বিচারের দোহাই দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় জনগণের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দমন করা উচিত নয় বলে তারা মন্তব্য করেনতারা বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর পরিচালিত অসংখ্য গণহত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরও একইভাবে বিচারের কাঠগড়ায় আনা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে আর কখনো সাহস না পায়

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচী:
২৬ ডিসেম্বর পার্টি প্রতিষ্ঠার তের বছরপূর্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ইউপিডিএফ-এর সকল ইউনিটে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে
এই কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে দলীয় পতাকা উত্তোলন, অধিকার আদায়ে নিহত শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিশুর‌্যালী, আলোচনা সভা, বিশিষ্ট ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মত বিনিময় ইত্যাদি

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের বহু আগে ১০ মার্চ ১৯৯৭ তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পাহাড়ি গণপরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ডাক দিয়েছিলএরপর তিন সংগঠনের উদ্যোগে ২৫ – ২৭ মার্চ ঢাকায় আহূত এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে ৭ দফা প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়এতে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিকে প্রাইভেট কোম্পানি‘, ‘রাজনৈতিকভাবে আদর্শচ্যুত ও দেউলিয়াঘোষণা দিয়ে বলা হয়, সমিতির নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার আদায় সম্ভব নয়৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হলে তিন সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রতিবাদে ঢাকায় চুক্তির কপি পুড়িয়ে দেয়পরে ১৯৯৮ সালে ২৫ – ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ গঠন করা হয়

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More