ইউপিডিএফের উদ্যোগে ‘বান্দরবানে পাহাড়ি ভূমি বেদখল ও প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Seminar ni Bandarban, 30.10.2014বান্দরবান: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর বান্দরবান জেলা ইউনিটের উদ্যোগে ‘বান্দরবানে পাহাড়ি ভূমি বেদখল ও প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার আজ ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বান্দরবান সদরস্থ বালাঘাটায় ইউপিডিএফ জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারটি সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকাল ৩টায় শেষ হয়।

সেমিনারে ভূমি সদস্যা কবলিত এলাকা নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নে সাপমারা ঝিড়ি, বান্দরঝিড়ি, ব্যইংমদক পাড়া, লামা উপজেলার সাপের ঘাটা, আজিজ নগর, ফাইশ্যাখালী, বান্দরবান সদরের চিম্বুক সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা প্রধান সংগঠনক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর নেতা শুভ চাক, রাঙামাটি জেলার সাজেক ভুমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেত্রী কাজলী ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের বরইতলী ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য নিংপ্রু মারমা ও লক্ষ্মীছড়ির বোরকা পার্টি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য কমলা দেবী চাকমা। সেমিনারে আরো আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লামা উপজেলার সাপেরঘাটা এলাকার উহ্লাসিং মারমা, আজিজ নগর এলাকার মংপ্রু হ্লা মারমা, বাইশারী মধ্যম চাক পাড়ার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম মহসিন কলেজের ছাত্র সাথোয়াইংগ্য চাক প্রমুখ। এছাড়া সাপমারা ঝিড়ির পোঅং কার্বারী ও ব্যইংমদক পাড়ার চিংঅংজাই মারমা এতে উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে প্রারম্ভিক বক্তব্য লিখিত আকারে পাঠ করেন ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা প্রধান সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।

আলোচনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা বলেন, বান্দরবানে বর্তমানে পাহাড়িদের তুলনায় বাঙালি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের নামে পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বান্দরবানের ক্রাইক্ষ্যং পাড়ায় বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতা শুভ চাক বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি আংক্ষ্যং ও চাক পাড়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে জেএসএস (সন্তু) নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। তারা কোন প্রতিবাদ করেনি। তাই আমাদের ভূমি ও অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।

সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, আমরা বহুবার উচ্ছেদ শিকার হয়েছি। সাজেকে ২০১০ সালে ভূমি রক্ষার সংগ্রামে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যেখানে নারীরা থাকবেনা সেখানে আন্দোলন সংগ্রাম সফল হবে না। তাই ভূমি রক্ষার সংগ্রামে নারীদের আরো বেশি সংগঠিত করতে হবে।

সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, ভূমিই আমাদের জীবন। ভূমি ছাড়া কোন জাতি বেঁচে থাকতে পারেনা। সাজেকের মত এখানেও ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বড়ইতলি ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য নিংপ্রু মারমা বলেন, আমাদেরকে সমস্ত দালালদের প্রতিহত করতে হবে। একতাই বল, একতাই শক্তি। একতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

ঘিলাছড়ি নারী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেত্রী কাজলী ত্রিপুরা বলেন, আন্দোলনের জোয়ার যখন আসে তখন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ঘরের কোনে বসে মৃত্যুর চেয়ে আন্দোলন সংগ্রামে জীবন দেয়ায় অনেক শ্রেয়। তিনি ভূমি ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

লামা উপজেলার সাপের ঘাটা এলাকার উহ্লাসিং মারমা ভূমি দেখলের বর্ণনা দিয়ে বলেন, লামা ফাইশ্যাখালীতে লাদেন গ্রুপ কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি জবর দখল করেছে। তবে এলাকাবাসীর সহায়তায় অনেক বেদখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে।

লামা আজিজ নগর এলাকার মংপ্রু হ্লা মারমা বলেন, একসময় আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ন ছিল। বর্তমানে আমরা সবাই সম্পূর্ণ অসহায়। তিনি লামায় ডেসটিনি গ্রুপ কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি জবরদখলের অভিযোগ করেন।

চিম্বুক এলাকার চংরাই ম্রো বলেন, বান্দরবানের পাহাড়িরা একতা ও সচেতনতার অভাবে দিন দিন ভূমি হারাচ্ছে। তিনি বলেন, চিম্বুক এলাকায় ম্রোদের মোট ৬৫টি গ্রাম আছে। এরাও প্রতিনিয়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ শিকার হচ্ছে।

সেমিনারে বক্তারা ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
———–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More