ইউপিডিএফ-এর ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিশু র্যালি সহ নানা কর্মসূচি পালিত
নিজস্ব প্র্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় ইউপিডিএফ-এর সকল ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় দলীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিশু র্যালী, আলোচনা সভা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে চা চক্র ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয় এবং দলীয় কার্যালয়ে বিপ্লবী সংগীত বাজানো হয়।
খাগড়াছড়িতে সকাল ৯টায় স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য প্রদীপন খীসা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, শহীদ পরিবারবর্গ ও স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সকাল ১১টায় “উদ্ধত রাইফেল-বেয়নেট সরিয়ে নাও; এই পৃথিবীটা আমাদেরও, আমরা নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি নিয়ে বড় হতে চাই” শ্লোগানে বর্ণাঢ্য এক শিশু র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। ইউপিডিএফের পতাকা হাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ৯ শতাধিক শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত র্যালীটি স্বনির্ভর মাঠ থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে বাসস্টেশনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ চেঙ্গী স্কোয়ার এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশ ব্যারিকেড তুলে নিলে র্যালীটি শান্তি নিকেতন, উপালি পাড়া, নারানহিয়া হয়ে আবার স্বনির্ভর মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিশুরা ‘অপারেশন উত্তরণ তুলে নাও, আমাদের গড়ে উঠার পরিবেশ দাও; শিশু অধিকার মেনে নাও, সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাও; পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নাও; পার্বত্য চট্টগ্রাম মনুষ্য বাসযোগ্য কর; অর্কির খুনীদের শাস্তি দাও; খেলার মাঠ, নদী, ঝর্ণা থেকে সেনা চৌকি তুলে নাও; উদ্ধত রাইফেল-বেয়নেটের মুখে খেলতে বলো না; সাম্প্রদায়িক উস্কানি বন্ধ কর; আমাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি বেদখল বন্ধ কর; আমাদের সম্পদ গ্যাস-কয়লা পাচার করা যাবে না…ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার প্ল্যাকার্ড বহন করে। শিশুরা ব্যান্ডের বাদ্যের তালে তালে ‘লং লিভ ইউপিডিএফ, জয় হোক ইউপিডিএফ’ শ্লোগানে র্যালী মুখরিত করে তোলে। তারা ইউপিডিএফ পতাকা উচিয়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানায়। এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজন শিশুদের উৎসাহ যোগায়।
শিশু র্যালী শুরু করার আগে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক কালো প্রিয় চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে শিশুরা সংঘাতময় নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতে বড় হতে বাধ্য হয়। তাই আমরা চাই তারা এখন থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখুক, কিভাবে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয় তা জানুক। কারণ তাদেরকেই ভবিষ্যতে পার্টি ও জনগণকে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
র্যালীর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অংগ্য মারমা র্যালী শেষে বলেন, “আমরাও এক সময় শিশু ছিলাম এবং তখন থেকেই সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন দেখে আসছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিশুরা যাতে ভয়মুক্ত নিপীড়নমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে তার জন্য দরকার জাতিসত্তার অধিকারসহ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন।” তিনি অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বাতিলপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনা শাসনের অবসান, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এছাড়া তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের প্রতি আহ্বান জানান।
খাগড়াছড়ি ছাড়াও, ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পানছড়ি, দিঘীনালা, মহালছড়ি, মানিকছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, সাজেক, কুদুকছড়ি, নান্যাচর, কাউখালী, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিপ্লবী সংগীত বাজানো, চা চক্র ও মতবিনিময় সভা, দর্শনীয় স্থানে পতাকা উত্তোলন ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।
এছাড়া বান্দরবানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় বান্দরবান জেলা সদরের বালাঘাটায় ইউপিডিএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ছোটন তঞ্চঙ্গ্যা, বিক্রম তঞ্চঙ্গ্যা ও সজীব তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।