উষাতন তালুকদার জাতীয় সংসদে যা বলেছেন

0

সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
usatan-cover-pic-22-609x340দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শুরু হওয়ার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সোমবার রাতে পার্বত্য রাঙামাটি আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ঊষাতন তালুকদার প্রথম বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে যা বলেছেন সিএইচটিনিউজ.কম পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো (যদিও তাঁর বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি, দুর্বলতা ও প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে) :

স্পীকার: মাননীয় সদস্য ঊষাতন তালুকদার উপস্থিত আছেন? আপনার জন্য সময় ১০ মিনিট।

ঊষাতন তালুকদার: মাননীয় স্পীকার আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর আলোচনা করার সুযোগ প্রদানের জন্যে।

মাননীয় স্পীকার, আমি এ আলোচনার পূর্বে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের এবং ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের অমূল্য আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি; যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি এবং সে সুবাদে এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে আজকে আমরা জনগণের সুখ-দুঃখের কথা, সমস্যা সমাধানের জন্য এখানে দায়িত্ব পালন করতে আসতে পেরেছি। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে স্মরণ করছি, যিনি এই মহান জাতীয় সংসদে দেশের খেটে-খাওয়া, গরীব-দুঃখী মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরেছিলেন, যিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ও গভীর ভাবনার কথা তুলে ধরেছিলেন।

মাননীয় স্পীকার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি উনার ভাষণে উনি আমাদের দেশের সার্বিক বিষয়ে উনি উনার ভাষণ রেখেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, দেশের সার্বিক অবস্থা সব মিলিয়ে উনি উনার ভাষণে বস্তুনিষ্ট ও জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দিয়েছেন এবং উনাকে আমি পার্বত্য চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আমার নির্বাচনী এলাকা পশ্চাদপদ জনপদ ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবং এই পাশাপাশি মূল্যবান ভোট প্রদান করে আমাকে এই মহান সংসদে এসে উনাদের সুখ-দুঃখের কথা, সমস্যা কথা তুলে ধরার জন্যে তথা বাংলাদেশে যাতে একটি গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, সরকার গঠিত হতে পারে সেভাবে এখানে উনাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন সে জন্যে উনাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি পার্বত্য চুক্তিকে উল্লেখ করেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মাননীয় স্পীকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক কিছু আইন প্রণীত হয়েছে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন প্রণীত হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারত থেকে জুম্ম শরণার্থীদের ফেরত আনা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন প্রণীত হলেও এসব এখনও পরিষদের নিকট সকল বিষয় হস্তান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন- আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ স্থানীয়, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, মাধ্যমিক শিক্ষা, স্থানীয় পর্যটন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলো হস্তান্তর করা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এক্ষেত্রে আমি আজকে যারা এখানে বিশেষ করে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব আমরা করছি। এখানে আমাদের  আমি বিশ্বাস করি এই সময়ে যে একটা টালমাটাল অবস্থার মধ্যে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন করে আজকে যে সরকার গঠন করার পরে আমাদের দেশ ও জাতিকে মাননীয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী রক্ষা করেছেন সে জন্য আজকে উনাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং উনি সাহসের সাথে ৯৭ সালে চুক্তি করেছেন বিভিন্ন বিরোধিতা সত্ত্বেও উনি স্বাক্ষর করেছেন পার্বত্য চুক্তি সাহসের সহিত সেজন্য উনাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এরপরে এই পার্বত্য সমস্যা আসলে একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। এই সমস্যার অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে পার্বত্য চট্টগামের ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমি আশা রাখবো যে, আমাদের এই সময়ে যে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের এক ভালো মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। যে ভালো মন্ত্রীসভার মধ্য দিয়ে দেশ ভালোভাবে পরিচালিত হবে এবং বিশেষ করে কৃষিখাতে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেছেন যে, কৃষিক্ষেত্রে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

আমাদের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয়াকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উনি এই সরকারের মধ্যে অন্যতম ক্লিন ইমেজ হিসেবে পরিচিত। এই যে মন্ত্রীসভা এবং এই সরকার এবং যদি ভালোভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় তাহলে পরবর্তীতে এই সরকার আরো পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে, পরবর্তীতেও জনগণ এই সরকারকে গ্রহণ করবে এবং আমি আশা রাখবো এই সরকার পরবর্তী সময়ে আরো ক্ষমতায় অধিগ্রহণ করতে পারবে।

যাই হোক, আমি যে বিষয়টি বলছি সেটা হলো যে দেশ কৃষি ক্ষেত্রে কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়া হয়েছে। আমি দোষারোপ করছি না, আমি আমার মতামত ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে। আমি আজকে পত্রিকা প্রথম আলোতে দেখলাম ফেরদৌসী বেগম, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতি। উনি বলেছেন, অনেক দেশেই আলু রপ্তানীর সুযোগ আছে। কিন্তু আমাদের দূতাবাসগুলো সে খোঁজ রাখে না। আসলে সত্যি রাখে কিনা আমি জানি না।

তবে আমি যেটা বলছি- কৃষকদের সযোগ সুবিধা অনেক দেয়া হচ্ছে সেটা জানি কিন্তু যে বিষয়টি আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি সেটা হলো- ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হয়। আজ যে আলু ৫-৭ টাকা করে প্রতি কেজি উৎপাদন করতে প্রয়োজন হয়, সেখানে দেড়-দুই টাকায় আজকে আমার কৃষক আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। আজকে ঢাকায় এসে দশ টাকা-পনের টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেজন্য আমি যেটা প্রস্তাব রাখতে চাই, সেটা হলো যে, আমার এলাকায় আনারস পঁচে যায়, আমার এলাকায় কাঁঠাল পঁচে যায়। সেজন্য যাতে করে ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং সংরক্ষণ, পরিকল্পনা যথাযথভাবে নেওয়া যায় সেজন্য আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যে শ্রমিক শৈল্পিক নৈপূন্যতায় আজকে আমাদের এই মহান সংসদকে নির্মাণ করেছেন, যে শ্রমিকরা আমরা দেখেছি যে, শ্রমিকদের মধ্যে বিগত ৫ বছরের রপ্তানী বস্ত্র খাতের মালিকরা সরকারী কোষাগার থেকে চার হাজার দুইশত পনের কোটি টাকার নগদ সহায়তা নিয়েছেন। ২০১২-১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত পোশাক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার দুইশত ছিয়াত্তর কোটি টাকা কর সরকার পেয়েছে। কিন্তু সরকারী তরফ থেকে সুবিধাধীন পঞ্চাশ শতাংশ কমিয়ে পঞ্চাশ শতাংশ শ্রমিকদের আবাসন, হাসপাতাল, তাদের সন্তানদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপনসহ জীবনমান উন্নয়নে সরকারী অর্থ ব্যয় করার জন্য প্রয়োজনীয় মতামত আমি ব্যক্ত করছি। সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদ কতৃক অনুমোদিত সংশোধনী শ্রম আইনে শ্রমিকদের জন্য……………

স্পীকার: মাননীয় সদস্য আপনার সময় শেষ হয়েছে। এক মিনিটের মধ্যে শেষ করেন।

ঊষাতন তালুকদার: চলতি বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে এবং প্রতি বছরের মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমতা বিধান করে শ্রমিক মালিক বান্ধব নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে আমাদের শ্রমিকদের যাতে করে, আমি শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করে এই শ্রমিকদের গরীব দুঃখী মানুষের সমস্যার সমাধান হবে না। সেটা অবশ্যই আমাদের মধ্যে যাতে করে একটা শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের স্বার্থে যাতে করে সরকার যাতে করে তাদের একটা কল্যাণমুখী সরকার হতে পারে সেভাবে তাদের প্রতি কৃষক-শ্রমকি মেহনতি মানুষের প্রতি দৃষ্টি রেখে সেভাবে আমাদের কার্যক্রম, পরিচালনা করা হয় এবং আমাদের দেশে যদি হঠকারীতা না হয়, এই সরকার যদি হঠকারীতা না হয়, সত্যিকারভাবে যদি জনদরদীভাবে মন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্যে আজ আমি বেশি সময় নিলাম না… (স্পীকার মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেন)।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More