এক বছরেও হলো না রমেল হত্যার বিচার!

0

স্টাফ রিপোর্টার : গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মারাত্মক আহত হওয়া নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্র ও পিসিপি নেতা রমেল চাকমা। আজ তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলেও এ ঘটনার কোন বিচার হয়নি।

গত বছরের ৫ এপ্রিল নান্যাচর বাজার থেকে সওদা করে বাসায় ফেরার পথে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে রাঙামাটি রিজিয়নের জি-টু মেজর তানভীরের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য রমেল চাকমাকে আটক করে টেনেহিঁচড়ে সেনাজোনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে দিনভর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সেনারা তাকে থানায় হস্তান্তরের চেষ্টা চালায়। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় ও  তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে গ্রহণ না করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়। সেখানেও তাকে ভর্তি না করলে সেনারা মধ্যরাতে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে পুলিশ ও সেনা গোয়েন্দাদের প্রহরায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

এরপর ২০ এপ্রিল তার লাশটি চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে নেয়ার পথে রাতে নান্যাচরের বুড়িঘাট বাজার এলাকা থেকে সেনারা পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে লাশটি ছিনিয়ে নেয় এবং ২১ এপ্রিল সামাজিক রীতিনীতি ছাড়াই লাশটি পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে।

রমেল চাকমা’র মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। তার উপর কী নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে দুই সপ্তাহ চিকিৎসার পরও সুস্থ না হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তা সহজে অনুমান করা যায়। নির্যাতনের ফলে তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, মৃত্যুর পরও তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

উক্ত ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ব্লগে এ ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে।  সিএইচটি কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে।

রমেল চাকমা’র পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এ কমিটি আজ পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন দেয়নি। অপরদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এবং আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও রহস্যজনক কারণে মামলা গ্রহণ করা হয়নি।

নান্যাচর জোন কমাণ্ডার লে. কর্নেল বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের বিরুদ্ধে রমেল চাকমাকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠলেও উক্ত দুই সেনা কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। উপরন্তু তাদের দাপট আরো বেড়ে গেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মেজর তানভীরের নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এদিন রাণী বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনে শিকার দুই মারমা বোনকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
অপরদিকে, বাহালুল আলম বর্তমানে তাদের সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। তার এসব কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এক বছরেও রমেল চাকমা হত্যার বিচার না হওয়ায় এটাই বলতে হয় ‘বিচারের বাণী যেন নিভৃতেই কাঁদে’!

শুধু রমেল হত্যার ঘটনা নয়, বিচার হয়নি সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণ ও সম্প্রতি রাঙামাটির বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য কর্তৃক দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন ঘটনারও। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী যা ইচ্ছে তা করতে পারবে কিন্তু এর কোন প্রতিকার বা বিচার পাওয়া যাবে না। এটাই যেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে শাসকগোষ্ঠীর অন্যতম পলিসিও।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সচেতন মহল এসব ঘটনার বিচার দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছেন।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More