করল্যাছড়ি সারনাথ অরন্য কুটির থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হোক
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির করল্যাছড়ি এলাকার জনগণের দাবি সারনাথ অরণ্য কুটির থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হোক। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমানে সেখানে সেনা ও পুলিশ মিলে মোট ৩০-৪০ জন সৈন্য অবস্থান করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সেখানে ‘সেনা-পুলিশের উপস্থিতির কারণে লোকজনের ধর্ম চর্চায় ব্যাঘাত ঘটছে। কুটিরের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করলে সেনারা বাধা প্রদান করে থাকে। ফলে কুটিরের কোনো উন্নয়নমূলক কাজই বর্তমানে করা যাচ্ছেনা।‘
গত ৩ জানুয়ারী ২০০৮ বিজিতলা থেকে সেনাবাহিনী এসে বিহার সংস্কারের কাজে বাধা দেয়। এ জন্য বিহারের ভোজনশালা ও ভিক্ষুদের থাকার ঘর নির্মাণ কাজ করা যায়নি।
সুনীল জীবন চাকমা জানান, সেনারা মাঝেমাঝে হৈহল্লা করে থাকে ফলে এতে ভিক্ষুদের ধ্যানে ও অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
অনেক সময় সেনারা ভিক্ষুদের সম্পর্কে বিহারে আগত দায়ক দায়িকাদের কাছে বিশ্রি মন্তব্য করে থাকে।
সেনাদের উপস্থিতির কারণে বিহারে ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে দায়ক দায়িকাদের নানা সমস্যা হচ্ছে। সেনারা বিহারে কাজ করতে আসা লোকজনকে আটক করে ভয়ভীতি দেখায়। জরুরী অবস্থার সময় বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাইলে সেনাবাহিনী তাতে বাধা দেয়। বিহারে কাজ করতে আসা যুবকদের তারা অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করে থাকে।
মূলত করল্যাছড়ি এলাকায় এবং বিশেষত সারনাথ অরণ্য কুটিরের আশে পাশের জমি জোরপূর্বক দখলের জন্য কুটিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি সারনাথ কুটিরের জমি কেড়ে নেয়ার জন্যও সেটলাররা সেনাদের সাহায্যে তৎপরতা চালায়। এ উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে সেটলাররা কুটিরের প্রধান আর্যজ্যোতি ভিক্ষুসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। পুলিশ ওই ভিক্ষুকে আটক করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
কুটিরের জমি বেদখলের জন্য সেটলাররা যে মামলা দেয়, খাগড়াছড়ি জজ কোর্টে নিষ্পত্তি হয় এবং মামলার রায় কুটিরের পক্ষে চলে যায়। ফলে আইনীভাবেও কুটিরের জমি কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।
এখনো সেনা খবরদারি
পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো সেনাবহিনী সিভিল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে থাকে। করল্যাছড়ি সারনাথ অরন্য কুটির পরিচালনা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক মি. সুনীল জীবন চাকমা বলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে মহালছড়ি জোন কমান্ডার তাদের সুনীল জীবন চাকমা, ক্যায়াঙঘাট ইউপি চেয়ারম্যান কিরন চাকমা ও সমীরন চাকমা এই তিনজনকে ডেকে বলেন যে, কুটিরের জায়গার বন্দোবস্তি কাগজপত্র ও কতসালের বন্দোবস্তি করা হয়েছে তা জানতে পারলে তারা এক মধ্যে “অস্থায়ী ক্যাম্প” তুলে নেবেন।
কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে এলাকার একজন জানান, এখনো নানাভাবে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র চলছে। কথাসূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন যে, আর্মিরা সে এলাকার কাছাকাছি কোথাও সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য জায়গা খুজছে।
অপরদিকে সেটলাররা বর্তমানে জায়গা দখলের দৃশ্যমান উদ্যোগ না নিলেও লোকজনকে তারা এই বলে হুশিয়ারি দিচ্ছেন যে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তারা আবার জায়গা দখলের উদ্যাগ নেবে।
এলাকাবাসীর দাবি ধর্ম চর্চায় সুবিধার জন্য সারনাথ অরণ্য কুটিরে মোতায়েনকৃত সেনা ও পুলিশ সদস্যদের তুলে নেয়া হোক। তাদেরকে সেখানে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।