কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন। আজ ৭ জানুয়ারি সোমবার খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, দিঘীনালা ও মহালছড়িতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা এ দাবি জানান।
দিঘীনালা উপজেলায় সকাল ১০টায় ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি থানা বাজার, উপজেলা কমপ্লেক্স ঘুরে বাস টার্মিনাল হয়ে লার্মা স্কোয়ারে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। মিনাকী চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর দিঘীনালা ইউনিটের সংগঠক কিশোর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা থানা শাখার সহ সভাপতি জীবন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দিঘীনালা থানা শাখার সহ সভাপতি অংকন চাকমা ও বাবু ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোপাদেবী চাকমা প্রমুখ। লুচি চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
এদিকে, পানছড়ি উপজেলার কলেজ গেট এলাকার বৌদ্ধ মন্দিরের মাঠ থেকে আজ সোমবার সকাল ১১টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পানছড়ি বাজার প্রদণি করে বাজার মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি অপরাজিতা খীসার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি বরুণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি বিবর্তন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পরম বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমেধ চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
অপরদিকে, মহালছড়ি উপজেলায় দুপুর ১২টায় মহালছড়ি কলেজ গেট থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ব্যানারে এক বিােভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদণি করে উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক চন্দনী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা ও মহালছড়ি থানা শাখার সভাপতি ঊষাময় খীসা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আপ্রুসি মারমা প্রমুখ।
এসব সমাবেশে বক্তারা কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টকে প্রহসনমূলক আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এ রিপোর্ট প্রত্যাহার ও নিরপে তদন্ত এবং ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এ দেশের শাসকগোষ্ঠী কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের মরিয়া হয়ে রা করে চলেছে। এভাবে প্রকৃত অপরাধীদের রা করার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হত্যাকান্ডের বিচার হচ্ছে না।
বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা নিছক নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা নয়, এই ঘটনা সংখ্যালঘু জাতির জনগণকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারি সরকারী চক্রান্ত। আগামী ১৩ জানুয়ারী সিআইডির চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ও প্রহসনমূলক বিচার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যদি অপহরণকারীদের রা করা হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে আবারো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করেন।
বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকল মানবতাবাদী শক্তি ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন (১১ জুন মধ্যরাত) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কজইছড়ি ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সশস্ত্র সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হন। ২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার তৎকালীন এস আই ফারুক আহম্মদ কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তিনি অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে ও কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হন। মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানোর নির্দেশ দেন।
এরপর সিআইডির মোঃ শহীদুল্লাহ গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর কল্পনা চাকমার কোন হদিশ পাওয়া যায়নি বলে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
এর আগে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ১৯ আগষ্ট সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেও আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।