কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে ৪ সংগঠনের বিক্ষোভ

0

ctgprgmphoto1

চট্টগ্রাম: “পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত রিপোর্ট মানিনা, নিরপেক্ষ শুনানী চাই” এই শ্লোগানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, সালেহ আহম্মেদ ও নুরুল হকসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত চার সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

আজ রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় নগরীর শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এক প্রতিবাদী সমাবেশে মিলিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুকৃতি চাকমার সঞ্চালনায় ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি রিতা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়  সদস্য মন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রূপন চাকমা ও নগর শাখার সম্পাদক জিকো চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের সমন্বয়ক হাসান মারুফ(রুমী) প্রমুখ।

সমাবেশে গণসংহতি নগর সমন্বয়ক হাসান মারুফ (রুমী) বলেন, ১৯৯৬ সালে ১২ জুন কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো। সেই সময় সেনাবাহিনী প্রচার করেছিলো এই ঘটান একটা প্রেমঘটিত। তাকে কখনো ভারতে, কখনো বেইজিং-এ নারী সম্মেলনে–এমন মনগড়া কাহিনী বানিয়ে লে. ফেরদৌস, সালে আহমেদ ও নুরুল হক গংদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়েছে। আমি এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই কল্পনা চাকমা অপহরণের সাথে জড়িত লে. ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের রক্ষা না করে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আগামী ১০ জানুয়ারি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে রাঙামাটি পুলিশ সুপারের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে দেয়া বাদী পক্ষের নারাজী আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। আমরা উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত অপরহণকারী লে. ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক ও সালেহ আহমেদ সহ জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শান্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে শুনানী হোক।

ctgprgmphoto2

তারা বলেন, ‘কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে আজ পর্যন্ত চারটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির পুলিশ সুপার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু তিনি আন্তরিকতার সাথে ও পক্ষপাতহীনভাবে তদন্ত করেননি। তাই আমরা তার তদন্ত রিপোর্ট ও আগের সকল পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত  রিপোর্টগুলো প্রত্যাখ্যান করছি।’

ঘটনার ২০ বছর ৭ মাস পরও অপহরণকারীদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই একটি বিশেষ মহল চিহ্নিত অপহরণকারীদের রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। প্রথমে বলা হয়েছে অপহরণ নয় এটা হৃদয়ঘটিত ব্যাপার। কিন্তু পরে সেনাবাহিনী তাদের ওই বক্তব্য থেকে সরে যায়। এরপর তারা অযথা তাদের খাড়া করা সংগঠনগুলো কখনো বলেছে কল্পনা চাকমা বেইজিং এ বিশ্ব নারী সম্মেলনে গিয়ে থাকতে পারেন, কখনো দাবি করেছে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আছেন, আবার কখনো বলেছে তাকে শান্তিবাহিনী গেরিলারা অপহরণ করেছে। অপহরণকারীদের রক্ষার বিশেষ মহলের এই চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘যখনই সাধারণ লোকজনকে খুন বা অপহরণের মতো ঘটনায় সেনাবাহিনীর কোন সদস্য জড়িত থাকে তখন ন্যায়বিচার পাওয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কল্পনা চাকমা অপহরণের যেমন আজও বিচার হয়নি, তেমনি গত বছর ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরে ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্রী ও সংস্কৃতি কর্মি সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ও হত্যারও বিচার হয়নি।’

সংগঠনের নেতারা আরো দাবি করেন মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার জবানবন্দীর ভিত্তিতে নতুন করে এজাহার লিখতে হবে এবং কল্পনা চাকমা অপহরণের রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের সনাক্ত করতে পাহাড়ি ও বাঙালি প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More