কল্পনা চাকমা অপহরণের সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে ৭ সংগঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড আজ ২ জানুয়ারী বুধবার এক বিবৃতিতে কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, অপহরণকারীরা চিহ্নিত ও পরিচিত হওয়ার পরও উক্ত রিপোর্টে তাদের নামোল্লেখ করা হয়নি।
সিআইডির তদন্তকে প্রহসন আখ্যায়িত করে বিবৃতিতে ৭ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, উপনিবেশিক শাসনামলে বৃটিশ শাসকরা ভারতে যেভাবে খুনী ও দাগী আসামীরা ইংরেজ হলেই তাদের রা করতো, পাকিস্তান শাসনামলে পাঞ্জাবী শাসকরা যেভাবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ সালাম-বরকত-রফিকদের খুনীদের রা করেছে, অনুরূপভাবে এ দেশের শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের মরিয়া হয়ে রা করে চলেছে। আর শাসকগোষ্ঠীর এ ধরনের আচরণের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অসংখ্য গণহত্যা ও হামলাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কারোর বিচার ও শাস্তি আজও হয়নি।
৭ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িত বলে সনাক্ত লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, সাজেক ভূমি রা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধনা চাকমা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সদস্য সচিব আনন্দ প্রকাশ চাকমা।
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন (১১ জুন মধ্যরাত) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কজইছড়ি ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সশস্ত্র সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা থানায় মামলা দেয়ার সময় এজাহারে তাদের নাম উল্লেখ করলে থানা কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে প্রশাসন তার উপর চাপ প্রয়োগ করে এজাহার থেকে চিহ্নিত অপহরণকারীদের নাম বাদ দিতে বাধ্য করে।
ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ১৯ আগষ্ট সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অনুপম সেন ও চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন। এই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেও আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।
অপরদিকে তৎকালীন বাঘাইছড়ি থানার এস আই ফারুক আহম্মদ ২০১০ সালের ২১ মে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তিনি অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে ও কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হন। মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানোর নির্দেশ দেন।
এরপর সিআইডির মোঃ শহীদুল্লাহ গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তিনি বলেন, “আমার তদন্তকালে উপযুক্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের অভাবে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। এমনকি তাহার সঠিক অবস্থানও নির্ণয় করা সম্ভব হয় নাই। ভিকটিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হইয়াছে। এই লক্ষে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ ছাড়াও বাদী পক্ষের এবং এলাকার লোকজনের সহায়তা কামনা করা হইয়াছে। এত চেষ্টা চালাইয়াও তাহার সঠিক অবস্থান সম্বন্ধে কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই। মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ১৬ বৎসর ধরিয়া তদন্ত কার্যক্রম চালাইয়াছি। কিন্তু কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের মত কোন ফলপ্রসূ লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। অদূর ভবিষ্যতেও যে উদ্ধার হইবে – তাহার কোন লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। তাই মামলাটির তদন্ত দীর্ঘায়িত না রাখিয়া চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং – ০৯ তারিখ ২৬/০৯/২০১২ ইং ধারা ৩৬৪ দঃ বিঃ দাখিল করিলাম।”
তার উক্ত রিপোর্ট মূলে জানা যায়, তার আগে পুলিশের ৩৪ জন তদন্তকারী অফিসার মামলাটি তদন্ত করেন। তবে বদলীজনিত কারণে তারা তদন্ত সমাপ্ত করতে পারেননি।#
……….