কল্পনা চাকমা অপহরণ ও তদন্ত সম্পর্কিত তারিখক্রম অনুযায়ী কিছু তথ্য

0

হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডএফ) এর মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেল কর্তৃক “কল্পনা চাকমা অপহরণ ও তদন্ত সম্পর্কিত তারিখক্রম অনুযায়ী কিছু তথ্য” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও কল্পনা চাকমার ডায়েরী অবলম্বনে প্রতিবেদনটি সংকলন করা হয় বলে এতে উল্লেখ করা হয়। গত ৬ জানুয়ারী ২০১৭ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো।

 

kalponachakma_rally_6wকল্পনা চাকমা অপহরণ ও তদন্ত সম্পর্কিত তারিখক্রম অনুযায়ী কিছু তথ্য

১৯ মার্চ ১৯৯৬
এদিন রাতে বাঘাইছড়ির কজইছড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার লে. ফেরদৌস নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে ৭টি পরিবারের মোট ৯টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং পাহাড়ি গ্রামবাসীদের মারধর করে। কল্পনা চাকমার ১ এপ্রিল লেখা একটি চিঠিতেও এ ঘটনাটি জানা যায়। (কল্পনা চাকমার ডায়েরী, সম্পাদনা: হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ২০০১)

এপ্রিল ১৯৯৬
বৈসাবির উৎসবের কয়েকদিন আগে লে. ফেরদৌস আবার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে গেলে কল্পনা চাকমা বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। (প্রাগুক্ত)

১২ জুন ১৯৯৬
১১ জুন গভীর রাতে অর্থাৎ ১২ জুন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন নিউলাল্যাঘোনা নামক নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে অপহৃত হন। তার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা অপহরণকারীদের তিন জনকে চিনতে পারেন। এরা হলেন কজইছড়ি ক্যাম্পের সেই সময়কার কমান্ডার লে. ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক ও সালেহ আহমেদ। তিনি বাঘাইছড়ি টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলমের কাছে অপহরণকারীদের নাম উল্লেখ করে ঘটনার বর্ণনা দেন। কিন্তু কালিন্দী কুমার চাকমা যখন থানায় গিয়ে মামলা করতে যান তখন ওসি অপহরণকারীদের নাম বাদ দিয়ে এফ.আই.আর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বা এজাহার লিপিবদ্ধ করেন।

২৭ জুন ১৯৯৬
কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে ও উদ্ধারের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় সড়ক অবরোধ চলাকালে বাঘাইছড়িতে অনুপ্রবেশকারী বাঙালিদের গুলিতে রূপকারী হাই স্কুলের ছাত্র রূপন চাকমা নিহত হন। এছাড়া একই দিন সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় নিখোঁজ ও খুন হন মনোতোষ ও সুকেশ।

১ জুলাই ১৯৯৬
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল কল্পনা চাকমার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে আর্জেন্ট একশন প্রচার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৭ জন ছাত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানায়।

২ – ৩ জুলাই ১৯৯৬
ঢাকা থেকে আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, পাহাড়ি গণ পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি দল কল্পনা চাকমা অপহরণ সংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধানে রাঙামাটি শহর ও বাঘাইছড়ি থানায় যায়।

৬ ‍জুলাই ১৯৯৬
আইন ও সালিশ কেন্দ্র কল্পনা চাকমার অপহরণ সংক্রান্ত তদন্তের ড্রাফট ফিল্ড রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বাঘাইছড়ির টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলম-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘TNO said he did not write the FIR. Rather, he said that he handwrote a statement on blank white paper for his own records. He then told Kalpana’s older brother to go to the police. The TNO’s notes are with him. He would not agree to let us copy it, but we did read it. It was far more thorough and specific (eg how many men came, what time, name of Lt. Ferdous) then the FIR.’ অর্থাৎ টিএনও বললেন তিনি এফআইআর লেখেননি। তিনি কেবল তার নিজের রেকর্ডের জন্য একটি সাদা কাগজে বক্তব্যগুলো হাতে লিখে রেখেছেন। এরপর তিনি কল্পনার বড় ভাইকে পুলিশের কাছে যেতে বলেন। টিএনও-র নোটগুলো তার কাছেই আছে। তিনি তা আমাদেরকে কপি করতে দেননি, তবে পড়তে দেন। এই নোটগুলো এফআইআর থেকে অনেক বেশী বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট (যেমন কতজন লোক এসেছিলেন, কোন সময়, লে. ফেরদৌসের নাম)।

৮ জুলাই ১৯৯৬
৩-৫ জুলাই মানিকগঞ্জের কৈটাতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে দেশের ৮২ জন উন্নয়ন গবেষণা কর্মী এক যুক্ত বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার সন্ধান না মেলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। (সূত্র: আজকের কাগজ)

১৩ জুলাই ১৯৯৬
ডেইলী স্টারের সাংবাদিক মোর্শেদ আলী খান A Month After Abduction, Kalpana Chakma Yet to be Rescued শিরোনামে Daily Star পত্রিকায় লেখেন ‘During the investigation it was found that the First Information Report (FIR), written by the OC from Kalicharan’s description, did not match the one recorded by the TNO of Baghaichari. The statement given to the TNO by Kalicharan was recorded with clear facts and figures while the FIR written by the OC lacked clarity. No one read out the FIR to Kalicharan before accepting it, it was alleged. অর্থাৎ তদন্তের সময় জানা যায় যে ‍ওসি কর্তৃক কালিচরণের বর্ণনা থেকে লিখিত এজাহারের সাথে বাঘাইছড়ির টিএনও-র রেকর্ডকৃত বক্তব্যের মিল নেই। কালিচরণ টিএনওকে যে বর্ণনা দেন তা তথ্য ও সংখ্যাসহ পরিস্কারভাবে লেখা হয়েছে, অপরদিকে ওসির লেখা এজাহারে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, এজাহার গ্রহণের আগে কেউ কালিচারণের কাছে তা পড়ে শোনায়নি।’ উল্লেখ্য, ২ – ৩ জুলাই ঢাকা থেকে আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের যে দলটি বাঘাইছড়িতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোর্শেদ আলী খান ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

একই তদন্ত দলের সদস্য এডভোকেট খালেদা খাতুন ২০০১ সালে লেখেন, ‘পুলিশ কল্পনা অপহরণের মামলাটিকে দুর্বল করার জন্য ঐ মামলার বাদী অপহৃতার ভাইয়ের জবানবন্দী অনুযায়ী তৈরি করা এফআইআর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের কথা বাদ দেয়। বাদীর জবানবন্দীটিও তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। কিন্তু একই ব্যক্তির টিএনওর কাছে দেওয়া জবানবন্দীতে অপহরণ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল।

১৭ জুলাই ১৯৯৬
উপরোক্ত তদন্ত দলের সদস্য ছিলেন মানবাধিকার কর্মী প্রিসিলা রাজ। তিনি ফিরে এসে ভোরের কাগজে ‘কল্পনা চাকমা গেলো কোথায়?’ শিরোনামে লেখেন: ‘কল্পনা অপহরণ মামলার এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) নিয়েও ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। মামলার বাদি কালিন্দী কুমার জানিয়েছেন, এফআইআর তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি জানান টিএনওর কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছেন এফআইআর-এ তার পুরোপুরি উল্লেখ নেই। এফআইআর কে লিখেছেন তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। রাঙ্গামাটি ডিসি, এসপি ও বাঘাইছড়ি থানার ওসি এলাকা সফরকারী সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ অন্যান্যদেরকে জানিয়েছেন, বাঘাইছড়ি থানার টিএনও তা লিখেছিলেন। কিন্তু টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কালিন্দী কুমারের অভিযোগ রেকর্ড করে তাকে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সাংবাদিকসহ অন্যান্যদেরকে টিএনও জবানবন্দীর কপি দেখিয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই জবানবন্দীতে আততায়ীদের ‘হাতে বন্দুক ও টর্চের’ উল্লেখ থাকলেও এফআইআরএ তা নেই। এ ছাড়া কালিন্দী কুমার চাকমা’র জবানবন্দি নেওয়ার পর এফআইআর পড়ে শোনানো হয়নি বলে যে অভিযোগ আছে সে বিষয়ে ওসি শহীদুল্লাহ বলেন, টিএনও কালিন্দী কুমারের জবানবন্দি নিয়েছেন, এবং তাকে পড়ে শুনিয়েছেন। … কালিন্দী কুমারের জবানবন্দি লেখার পর তিনি তাকে পড়ে শোনাননি স্বীকার করেছেন টিএনও জাহাঙ্গীর আলম।’

২২ জুলাই ১৯৯৬
২৪ পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে একটি দীর্ঘ প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয়, যা ২৪ জুলাই ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে কল্পনা চাকমা বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগ দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন ও গোপনে বিদেশে চলে যেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রথম দিকে ঘটনাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেম ঘটিত ব্যাপার বলে প্রচার করা হলেওে উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তা অস্বীকার করা হয়। তিন সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সেনাবাহিনীর উক্ত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়, যা ২৫ জুলাই ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

২৫ জুলাই ১৯৯৬
পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকারের কাছে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও দোষীদের শাস্তিসহ ৪ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করে।

২৭ জুলাই ১৯৯৬
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে।

৩১ জুলাই ১৯৯৬
মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরাদের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলে তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। পরে তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠিত হয়, যার প্রধান ছিলেন বিচারপতি আবদুল জলিল। অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তৎকালীন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন।

৮ আগস্ট ১৯৯৬
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে যে, তারা কল্পনা চাকমার মা’র সাক্ষাতকার নিয়েছে এবং তার মা দাবি করেছে যে, কল্পনা চলে যাওয়ার পর দু’বার তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী অপহরণের ৩৭ দিন পর কল্পনার সন্ধানদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে হেলিকপ্টারে প্রচারপত্র বিলি করেছিল।

১৮ আগস্ট ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার মা বাধুনী চাকমা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের উক্ত দাবিকে অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন কমিশনের নেতারা সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বিডিআর ও স্থানীয় সেটলারদের পরিবেষ্টিত হয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি কমিশনের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ আনেন।

৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬
‘কল্পনা চাকমাকে নিয়ে ত্রিপুরাতেও নানা বিভ্রান্তি’ শিরোনামে দৈনিক সংবাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়: ‘কল্পনা চাকমা ত্রিপুরায় আছেন – এমন মত প্রকাশ করেন সেই সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কল্পনা এখন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার আন্দারছড়া গ্রামে তার মাসির বাড়িতে আছেন। প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল দক্ষিণ ত্রিপুরার রাইমা ভেলি সাবডিভিশনের শুক্রাই গ্রামে।’ সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় যে, কল্পনা চাকমা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গণ্ডাছড়ায় আছেন। কিন্তু বিবিসির সুবীর ভৌমিক এক প্রতিবেদনে তা ভিত্তিহীন বলে সংবাদ দেন।

২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮
আব্দুল জলিলের নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। তবে এই রিপোর্ট এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। ৪০ পৃষ্ঠার উক্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘Kalpana Chakma has been abducted either purposely or by force, but because of lack of adequate evidences and proofs it has not been possible for us to determine by whom. Therefore, there is no reason to recommend legal actions against anyone.’ অর্থাৎ কল্পনা চাকমা ইচ্ছায় হোক বা জোরপূর্বক হোক অপহৃত হয়েছেন। তবে পর্য়াপ্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের অভাবে কারা তাকে অপহরণ করেছে তা আমাদের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। সুতরাং কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার কোন কারণ নেই।

তদন্ত দলের সদস্যরা ঢাকা ও রাঙামাটিতে বসে তাদের তদন্ত কাজ চালান, তারা কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যেমন তৎকালীন বাঘাইছড়ি থানার টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলম, কল্পনা চাকমার মা বাধুনী চাকমা ও তার বৌদিসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাতকার নেননি এবং আলামত পরীক্ষা করে দেখেননি। এ কারণে তাদের রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে পারে না।

২১ মে ২০১০
বাঘাইছড়ি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা এ প্রতিবেদনের ওপর নারাজী আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা দুই বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশ ও সিআইডির প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা আব্দুল জলিলদের তদন্ত রিপোর্টের পুনরাবৃত্তি মাত্র। তারাও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়নি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত পরীক্ষা করে দেখেনি। মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা অপহরণকারীদের চিনতে পেরেছেন বলে সকল তদন্তকারীদের কাছে উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তার কোন উল্লেখ করা হয়নি।

১৬ জানুয়ারী ২০১৩
তার তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজী আবেদন করা হলে বিজ্ঞ আদালত ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অধিকতর তদন্তের জন্য রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এ দিন থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্য়ন্ত কমপক্ষে ২২ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছানো হয়।

৩ জুন ২০১৬
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল কল্পনা চাকমা অপহরণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফটো একশন কর্মসূচী পালন করে। এতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা কল্পনা চাকমা কোথায় পোস্টার লিখে তদন্ত সম্পর্কে জানতে চায় ও তাকে উদ্ধারের দাবি জানায়।

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ বার বার পেছানোর পর রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘আমার তদন্তকালে ভিকটিমের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। এই লক্ষে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ ছাড়াও বাদীর পক্ষে এবং এলাকার লোকজনদের সহায়তা কামনা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করিয়াও ভিক্টিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং মামলার রহস্য উদঘাটন হয় নাই। বিধায় মামলা তদন্ত দীর্ঘায়িত না করিয়া বাঘাইছড়ি থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং ০৩, তারিখ ৭/৯/২০১৬, ধারা ৩৬৪ দ: বি: বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিলাম। ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমা সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া গেলে বা তাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হইলে যথানিয়মে মামলাটির তদন্ত পুনরুজ্জীবিত করা হইবে।’

১৬ অক্টোবর ২০১৬
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা ও হিল্ উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা এক যৌথ বিবৃতিতে রাঙামাটি পুলিশ সুপারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বলেন, ‘এটিও পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর মতোই পুরোপুরি সাজানো, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং স্পষ্টতই চিহ্নিত অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

১০ জানুয়ারী ২০১৭
রাঙামাটি পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনের ওপর কালিন্দী কুমার চাকমা আদালতে যে নারাজী আবেদন করেন তার শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।


হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল কর্তৃক বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও কল্পনা চাকমার ডায়েরী অবলম্বনে সংকলিত। ৬ জানুয়ারী ২০১৭।

————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More