কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা: আগামী ১৬ জানুয়ারি নতুন শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেছে আদালত

1

রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার শুনানী আজ ১১ জানুয়ারি রবিবার দুপুর পৌনে ১টায় রাঙামাটি মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানী শেষে রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুদ্দৌল্লা কুতুবী আগামী ১৬ জানুয়ারি আবারো নতুন শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেছেন।

শুনানীর সময়
মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমাআদালতকে বলেন, ‘এই তদন্ত প্রতিবেদন আমি প্রত্যাখ্যান করছিআমি তিনজনের নামবলার পরও কোন অদৃশ্য কারণে অপহরণকারীদের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করাহয়নি?’ তিনি বলেন, ‘আমি সুস্পষ্টভাবে অপহরণকারী হিসেবে লেফটেন্যান্টফেরদৌস, ভিডিপি কমান্ডার নুরুল হক ও সালেহ আহম্মদের নাম বলেছিমামলারএজাহারেও তাঁদের নাম উল্লেখ করেছিকিন্তু কোনোটিতে তাঁদের নাম আসেনি’ 
আইনজীবীরা কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরবিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো.সিরাজুদ্দৌলা কুতুবীও তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেনতিনি বলেন, তাঁরা কোনো সুস্পষ্ট মতামত না দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলকরেছেন

আদালতে আইনজীবীরা কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিজানিয়ে বলেন, ‘বিচারপতি আবদুল জলিলের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশন, পুলিশ ওসিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেখেছিকোনোটিতে আসামিদের নাম আসেনিএখন আরআমরা পুলিশের তদন্ত চাই নাএখন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক

আইনজীবীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, সম্প্রতিভারতের দিল্লিতে ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ১৮ দিনের মধ্যে আসামিদেরগ্রেপ্তার করা হয়েছেঅথচ কল্পনা চাকমার অপহরণের ১৬ বছর পরও অভিযুক্তব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি

ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বলে উল্লেখ করেঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে কি না জানতে চানতিনি বলেন, এখানে বিচারকের স্বল্পতা রয়েছেতাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেঅনেক সময় লাগতে পারেতদন্ত যেন দ্রুত হয়, সেভাবে বিকল্প কী ব্যবস্থানেওয়া যায়, তা আপনারা বলেনপরে কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার সবগুলোতদন্তের নথি দেখে আদেশ দেবেন বলে উল্লেখ করেন
শুনানী চলাকালে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান,গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী সাইদিয়া গুলরুখ, একজন বিদেশী মানবাধিকারকর্মী, সিএইচটি কমিশনের প্রতিনিধি হানা সামস ওঘিলাছড়ি নারী সমাজেরআহ্বায়ক সুমতি চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রায় ৪০-৫০জন কর্মী ও সমর্থক সহ সাংবাদিক এবং  আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমা লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর তার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ সিআইডি এ অপহরণ মামলার সর্বশেষ চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট রাঙামাটির মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে দাখিল করেন। এ রিপোর্টে কল্পনা চাকমাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ভবিষ্যতেও খুঁজে পাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়।
ইতিমধ্যে কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তি সিআইডিএর দাখিল করা তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। এসব সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌসসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, গত সাড়ে ষোল বছরে চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার না করে মামলার শুনানী অনুষ্ঠানকে বিচারের নামে কালক্ষেপনের মাধ্যমে অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা চলছে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।#
……….

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More