কাউখালিতে ক্যাম্প স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করতে সেনা প্রধানের কাছে জনপ্রতিনিধিদের স্মারকলিপি
কাউখালি প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির কাউখালি উপজেলার দোবাকাবা-নভাঙা গ্রামে সেনা ক্যাম্প স্থাপন কাযক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেনাপ্রধানের বরাবরে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৫ নভেম্বর ২০২০) কাউখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ধন কুমার চাকমা, ৭ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার অমল কান্তি তালুকদার, বর্তমান মহিলা মেম্বার মিনু মারমা (৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ড), নভাঙা গ্রামের কার্বারী দয়াধন চাকমা, দোবাকাবা গ্রামের কার্বারী নিশিধন চাকমা এবং সাবেক চার ইউপি সদস্য রবি কুমার চাকমা, রাজীব চাকমা, ফনিন্দ্র চাকমা ও পাইক্রামা মারমা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত না থাকায় অফিস সুপার অসীম কুমার চাকমা স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২২ নভেম্বর ২০২০ রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলাধীন ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে অন্তর্গত দোবাকাবা ও নভাঙ্গা নামক দুই গ্রামের সীমান্তবতীর্ এলাকায় কোন প্রকার আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে হঠাৎ সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে।
সাধারণত জেলা প্রশাসক কর্তৃক নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সরকারী কাজে ব্যবহারের জন্য জনসাধারণের জমি অধিগ্রহণ করার বিধান থাকলেও নভাঙা-দোবাকারায় বর্তমানে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে উক্ত নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না বলে স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয় এবং ‘যেভাবে জমির দখল নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ আইন-বিরুদ্ধ এবং অন্যের জমিতে অনধিকার প্রবেশ’ বলে মন্তব্য করা হয়।
ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরুর আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, ভূমি মালিক ও স্থানীয় জনগণের কোন মতামত নেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘কোন এলাকায় সরকারী স্থাপনা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের মতামত নেওয়ার বিধান আইন কর্তৃক স্বীকৃত।’
তাছাড়া কাউখালির একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ক্যাম্প স্থাপন ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।
দোবাকাবা-নভাঙায় সেনা ক্যাম্পের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে ৬টি কারণে উক্ত ক্যাম্প স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করা জরুরী বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো:
এক. সাধারণত কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হলে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু অত্র এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর এমন কোন সশ্রস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি, যার জন্য এখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
দুই. যেখানে ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে ২৫ বছর আগে সৃজন করা বাগান বাগিচা রয়েছে। কাজেই এই ক্যাম্প স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করা না হলে ভূমির মালিকরাসহ এলাকাবাসী আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। প্রথমত তাদের বাগান বাগিচা ধ্বংস হবে। দ্বিতীয়ত তারা উক্ত বাগানে যেতে পারবেন না ও বাগানের পরিচর্যা ও শ্রীবৃদ্ধি করতে পারবেন না। ফলে তারা তাদের জমি ও বাগান বাগিচার ভোগ দখল থেকে বঞ্চিত হবেন, যা অন্যায়, অন্যায্য ও অমানবিক।
তিন. সেনা ক্যাম্প স্থাপিত হলে বনের উপর প্রথাগতভাবে এবং সামাজিকভাবে আমাদের যে অধিকার (শিকার, বনজ ফল মূল সংগ্রহ, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, গবাদি পশুর চারণভূমি প্রভৃতি) তা লঙ্ঘিত হবে।
চার. নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপিত হলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে, কারণ ক্যাম্পের আশে পাশের জায়গাগুলো ক্যাম্প কতৃর্ক অধিগ্রহণ করা হবে এবং জন সাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হবে। জমির ভোগদখল থেকে বঞ্চিত হলে উচ্ছেদ হওয়া ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায় থাকবে না।
পাঁচ. জমির মালিকরাসহ স্থানীয় গ্রামবাসীরা জীবিকার জন্য এমনকি দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য আশেপাশের বন ও বাগানের উপর নির্ভরশীল। ক্যাম্প স্থাপিত হলে তারা তাদের জীবনধারণের উৎস থেকে বঞ্চিত হবেন।
ছয়. ক্যাম্প স্থাপিত হলে গ্রামবাসীরা দোবাকাবা ছড়ায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁধ দিয়ে সৃষ্ট জলাধারটি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ এ বাঁধের একেবারে পাশেই ক্যাম্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, ক্যাম্পের চতুর্দিকে আশেপাশের এলাকায় সাধারণ জনগণকে যেতে দেয়া হয় না। কাজেই উক্ত ক্যাম্পের কারণে এ জলাধারটি ব্যবহার করতে না পারলে এলাকার লোকজন বর্মাছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাটে বাঁশ-গাছ বিক্রি করতে পারবে না। কারণ এ বাঁধের জলাধারের পানি ব্যবহার করেই গাছ-বাঁশ বাজারে নেওয়া হয়। এছাড়া এলাকাবাসী তাদের পুষ্টির অন্যতম উৎস থেকেও বঞ্চিত হবে। কারণ তারা এই জলাধারে মাছ চাষ করে তাদের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।