কাউখালীতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর অভিযান, মোটর সাইকেল ছিনতাই!
কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি ॥ রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় কলমপতি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পুরাতন পোয়াপাড়া গ্রামে চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোঃ বাহাদুর ও মোঃ বাদশাকে সাথে নিয়ে তাৎক্ষণিক এক ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী।
গতকাল সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭) বিকেল ৫টায় ঘাগড়া জোন ও কাউখালী আর্মি ক্যাম্পে কর্মরত ক্যাপ্টেন রেজার নেতৃত্বে ১২ জন সেনা সদস্য ৩টি সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে পুরাতন পোয়াপাড়ায় অবস্থিত সাধন চাকমার দোকান ঘেরাও করে কথিত দুজন বহিরাগত লোকের খোঁজ করতে থাকে এবং দোকানে তল্লাশি চালায়। এসময় তারা দোকানের সামনে এনজিও কর্মকর্তার রেখে যাওয়া মোটর সাইকেলের ছবি তুলে নিয়ে যায়।
এছাড়াও সেনারা সাধন চাকমা, পিতা-হরিরাম চাকমা এবং কালাবাশি চাকমা, পিতা-বুদ্ধমনি চাকমা সর্ব সাং-পুরাতন পোয়াপাড়া’র বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। তবে সেনারা অবৈধ কোন কিছু পায়নি। সেনাদের সাথে কাউখালী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সেটলার মোঃ বাহাদুর, পিতা- মাওলানা আবুল কালাম(কালা হুজুর), সাং- আমতলা, রাঙীপাড়া এবং মোঃ বাদশা, পিতা- আওয়াল ভান্ডারী, সাং- রাঙীপাড়া, কাউখালী সার্বক্ষণিক ছিল। মূলত তারাই সেনাবাহিনীকে উস্কে দিয়ে সেখানে অভিযানে নিয়ে যায়। তারা উভয়েই এলাকায় চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই , মারামারি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বাদশা সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে জামিনে রয়েছে।
এদিকে, সেনাবাহিনীর সাথে অভিযান শেষে সন্ধ্যার দিকে মোঃ বাহাদুর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দেখিয়ে ১০/১২ জন চ্যাঙরা ছেলে নিয়ে কচুখালী গ্রাম থেকে বিশিষ্ট মুরুব্বী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সুরেশ কান্তি চাকমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে অনিক চাকমার মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেনা সদস্যদের প্রত্যক্ষ মদদে বাহাদুরের অপকর্মের বাহাদুরিতে এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ ধরনের দাগী অপরাধীদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করায় এলাকায় পাহাড়ী বাঙালী উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা কানাঘুষা চলছে।
তবে কি সেনাবাহিনী দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীর প্রশ্রয় দাতা? তা না হলে কিভাবে তাদের নাগের ডগায় ও সেনাবাহিনীর নাম ভাঙিয়ে মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে? তারা কি বাহাদুরের মতো সন্ত্রাসীর অঙ্গুলি হেলনে চলেন? এ ধরনের নানা প্রশ্ন এখন এলাকার জনমনে দেখা দিয়েছে। এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাদের কারণে বিনষ্টের সম্ভাবনা দেখছেন সচেতন মহল।
কলমপতির ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ শরিফ বলেন, বাহাদুর মূলত একজন মস্তান। তার নেতৃত্বে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। বারংবার বলা সত্ত্বেও তাকে শোধরানো যাচ্ছে না। সেনা সদস্যরা তাকে ব্যবহার করায় তিনি ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। বাহাদুরদের মতো কতিপয় ব্যক্তির অপতৎপরতার কারণে এলাকায় পাহাড়ি বাঙালী উভয় সম্প্রদায়ের জীবিকার উৎস গাছ-বাঁশের ব্যবসাও মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় বলে কলমপতি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোতালেব মেম্বার মন্তব্য করেন।
সর্বশেষ খবর মতে, অনিক চাকমার মোটর সাইকেল উদ্ধারে কলমপতি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমা, আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদ, মোতালেব মেম্বার, আব্বাস মেম্বার, কাউসারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে গত কিছুদিন যাবৎ এলাকায় এলাকায় সেনা তৎপরতা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭) একদল সেনা সদস্য ঘাগড়ার ৪ নং ওয়ার্ডের উল্টাপাড়া গ্রামে টহল দিয়ে যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ৪নং ও ৫ নং ওয়ার্ডের তালকদারপাড়া ও পানছড়িতে সেনারা টহল দেয়। এসময় সেনারা বিভিন্ন স্কুল ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর প্রধান শিক্ষক ও বিহার অধ্যক্ষদের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর নির্দিষ্ট ফরমে তালিকাভুক্ত করে নিয়ে যায়। পাড়ায় কোন ব্যক্তি সরকারী চাকুরীজীবী, এনজিও-তে কর্মরত বা প্রবাসী আছে কিনা তা জানতে চায়। ‘সন্ত্রাসী’রা কখন আসে এবং তাদের চাঁদা দিতে হয় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়।
উল্লেখ্য গত ২০ আগষ্ট ২০১৭ ইং ঘাগড়া ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের ৪টি গ্রামে (তালুকদার পাড়া, রাঙীপাড়া, বামে উল্টা ও ডানে উল্টা পাড়া) এক যোগে গভীর রাতে সেনা সদস্যরা জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নজনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।