কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মাকে শেষ শ্রদ্ধা ও শেষ বিদায় জানালেন বিপুল চাকমা

0
# মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিপুল চাকমা।
# মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিপুল চাকমা।

পানছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে পুলিশ প্রহরাধীন অবস্থায় মায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা ও শেষ বিদায় জানিয়েছেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা। এ সময় তার হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ ও পায়ে ছিল ডান্ডাবেড়ি।

আজ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিপুল চাকমার মা মৃত নিরুদেবী চাকমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে মাতা মৃত নিরু দেবীর প্রতি গ্রভীর শ্রদ্ধা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরিবারের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন বিপুল চাকমা’র মামা শান্তিময় চাকমা ও পিতা সুনয়ন চাকমা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফে’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নতুন কুমার চাকমা। পিসিপি’র সভাপতি সিমন চাকমার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য,  পিসিপি-গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা কমিটি, ডিওয়াইএফ পানছড়ি থানা শাখা, শুভাখাঙ্খী-সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়েছে।

# ফুল দিয়ে বিপুলের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পিসিপি নেতা-কর্মীরা
# ফুল দিয়ে বিপুলের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পিসিপি নেতা-কর্মীরা

অনুষ্ঠানে ২নং চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা’র পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)’র কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা ও পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিমন চাকমা। সংহতি  বক্তব্য রাখেন ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি সাঈদ বিলাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এমএম পারভেজ লেলিন প্রমুখ।

নতুন কুমার চাকমা বলেন “যে জাতি অন্যকে শোষণ করে, সে জাতি নিজেরাও মুক্ত নয়।” বর্বোরচিত ও পৈশাচিক আচরণ করা না হলে নিরু দেবী আজ বেঁচে থাকত।

এমএম পারভেজ লেলিন বলেন, মাতা নিরু দেবীর মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এই মৃত্যুর জন্য প্রশাসন দায়ী। সারাদেশের মানুষ আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি ও শোষণের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে। হত্যা, গুম ও জেলে অন্তরীন রেখে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। বিপুল চাকমা’র মুক্তির দাবিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। সমতল ও পাহাড়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে একই কাতারে এসে আন্দোলন করতে হবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যেতে হবে।

সিমন চাকমা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রশাসন কর্তৃক অন্যায়ভাবে অসুস্থ মায়ের সামনে থেকে ছেলেকে আটক “গণতন্ত্র” প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি বিপুল চাকমার কারামুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৩ অক্টোবর) ক্যান্সারে আক্রান্ত মাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পানছড়ি থানার সামনে গাড়ি থামিয়ে পুলিশ অসুস্থ মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিপুলকে গ্রেফতার করে।  ছেলেকে গ্রেফতারের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পরদিন ভোররাতেই বিপুলের মা নিরুদেবী চাকমা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান।  আর বিপুলকে ডজনের অধিক মিথ্যা ও হdscf8403য়রানিমূলক মামলায় পাঠানো হয় কারাগারে।

বিপুলের পিতা সুনয়ন চাকমা ছেলের প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানালে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান দু’টি শর্তে আজ ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিপুলকে প্যারোলে মুক্তির আদেশ দেন। শর্তগুলো হচ্ছে-১ প্যারোলে মুক্তির সময় পর্যন্ত বন্দিকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে থাকতে হবে, ২. প্যারোলে মুক্ত বন্দিকে অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যে পূনরায় কারাগারে ফেরত আসতে হবে।

জেলা প্রশাসক কর্তৃক সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে প্যারোলে মুক্তির আদেশ দেয়া হলেও আইনের নানা জটিলতা দেখিয়ে এ সময় কমিয়ে দিয়ে দুপুর দেড়টায় তাকে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়।

প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর পুলিশ প্রহরাধীন হয়ে নিজ বাড়িতে যেতে হয় বিপুলকে। এ সময় বুকে পুলিশ লেখা একটি পোশাক তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়। আর হাতে হ্যান্ডকাফ আর পায়ে ছিল ডান্ডাবেড়ি লাগানো। পুলিশের গাড়িতে করে বিকাল ৩টায় তাকে বাড়িতে পৌঁছানো হয়। এ সময় তাঁর মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসা হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও সংগঠনের নেতা-কর্মী শ্লোগান দেন এবং দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেন। পরে ফুল দিয়ে মায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

# সমবেত ছাত্র-জনতা ও কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন বিপুল চাকমা।
# সমবেত ছাত্র-জনতা ও কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন বিপুল চাকমা।

এরপর বিপুল চাকমা সমবেতন ছাত্র-জনতা ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার মাকে সিটি স্ক্যান করার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জব্বারের নেতৃত্বে আমাদের গাড়ি থামানো হয়। অসুস্থ মায়ের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালি ও অমানবিক আচরণ না করার অনুরোধ করলেও আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এই ঘটনা দেখে তৎক্ষণাৎ আমার মা রক্ত বমি করেন। এতে শারিরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায় আমার মায়ের মৃত্যু ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, জাতির জন্য রাজপথে থাকার কারণে শুধু কারাবরণ নয়, যদি জীবনও উৎসর্গ করতে হয় তবুও আমার আফসোস নেই। আজ আমার মা নেই কিন্তু আমি যদি আপোষহীন ও আদর্শবাদী ধারার সংগঠনের কাজে অবিচল থাকি তাহলে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মায়েরা আমার পাশে থাকবে।

পরে চিতায় আগুন দিয়ে মাকে শেষ বিদায় জানান তিনি।

শেষে বিপুল চাকমা’র মুক্তির দাবি জানিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মী ও হাজারো ছাত্র-জনতা বিভিন্ন শ্লোগানের মধ্য দিয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিকাল ৪টায় শ্মশান থেকে শুরু হয়ে লোগাঙ বন বিহার সংলগ্ন বাবুরো পাড়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

বিকালে বিপুলকে আবারো পুলিশ প্রহরায় কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়।
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More