ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে সংহতি ও নতুন বছরে শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
সিএইচটিনিউজ.কম
ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রদর্শন এবং নতুন বছর ২০১৫ তে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশবাসীর জন্য শান্তি কামনা করে করে আজ ৩১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা দেশের জনগণ যখন ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন-নির্যাতনে নিষ্পেষিত, অপসংস্কৃতির করালগ্রাসে জর্জরিত তখনই পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোনরত ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির উদ্যোগে এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালিত হলো।
“নববর্ষ ২০১৫ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশবাসীর জন্য শান্তি বয়ে আনুক” এই শ্লোগানে ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রদর্শনের লক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদরের রেড স্কোয়ার(নারাঙহিয়া মোড়) থেকে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে একটি মৌন র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি সারিবদ্ধভাবে উপজেলা, কলেজগেট, চেঙ্গী স্কোয়ার, মহাজন পাড়া হয়ে নারিকেল বাগানে মহিলা কলেজ থেকে আগত অপর একটি র্যালির সাথে মিলিত হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে সমাবেশ করে। একই সময় কদমতলী থেকে আরো একটি র্যালি চেঙ্গী স্কোয়ারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এই কর্মসূচিতে কয়েক শ’ নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন । খাগড়াছড়ি পৌর এলাকা সমাজ উন্নয়ন সমন্বয়ক কমিটিও ব্যানার সহকারে কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
সমাবেশে ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক সোনালী চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অংগ্য মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন খাগড়ছড়ি পৌর সমাজ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কিরণ মারমা ও খাগড়ছড়ি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে বগাছড়ির ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে সংহতি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জনগণের জন্য শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় বক্তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে ১৯৯২ সালে লোগাং গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘটিত সকল গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে চেঙ্গী স্কোয়ারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
এদিকে, একই সময়ে গুইমারা, মহালছড়ি, দীঘিনালা, রামগড় বাঘাইছড়ি, সাজেক সহ বিভিন্ন স্থানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে রামগড় সদরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিজিবি বাধা দেয়।
গুইমারা: “২০১৫ সাল হোক ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির!, বিভেদ-ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, ভূমি বেদখল-খুন-ধর্ষণ সমস্ত অপরাধের অবসান ঘটুক!” এই শ্লোগানে ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে গুইমারায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা থানা শাখা।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে গুইমারা সড়ক ও জনপদ বিভাগের গেট থেকে একটি মৌন মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রামেসু বাজার গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি মাটিরাঙ্গা থানা শাখার অর্থ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও গুইমারা থানা শাখার সদস্য কুলিন চাকমা।
মহালছড়ি: “নববর্ষ ২০১৫ সাল হোক জনতার সংগ্রামী মৈত্রী সুদৃঢ়করণের সূচনা!” এই শ্লোগানে ভূমি বেদখল, খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে মহালছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে বুধবার সন্ধ্যায় বাবু পাড়া থেকে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে একটি মৌন মিছিল বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মহালছড়ি বাস স্টেশনে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডএফ) এর মহালছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অলকেশ চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহালছড়ি থানা শাখার সভাপতি তপন চাকমা।
দীঘিনালা: “নববর্ষ ২০১৫ সাল হোক জনতার উত্থানের বছর” এই শ্লোগানে অধিকারহারা নির্যাতিত বগাছড়িবাসীর সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশের লক্ষ্যে বুধবার সন্ধ্যায় দীঘিনালায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে ইউপিডিএফ’র উপজেলা ইউনিট কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে এক র্যালি শুরু হয়ে বাস স্টেশন ঘুরে লারমা স্কোয়ারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি জীবন চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দীঘিনালা থানা শাখার সহসভাপতি চৈতালী চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কিশোর চাকমা, জহেল চাকমা ও এন্টি চাকমা।
বাঘাইছড়ি: ২০১৫ সাল হোক ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির, বিভেদ-ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, ভূমি বেদখল-খুন-ধর্ষণ সমস্ত অপরাধের অবসান ঘটুক” এই শ্লোগানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের ব্যানারে বাঘাইছড়ি উপজেলার করঙাতলি বাজারে অবস্থিত যৌথ কার্যালয়ের সামনে বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচী শুরু হয়। কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে করঙাতলি বাজার কমিটিও অংশ গ্রহণ করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি উদয় বিকাশ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিময় চাকমা।
সাজেক: বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি ও সাজেক নারী সমাজের ব্যানারে সাজেকের উজো বাজার চৌমুহনীতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। “২০১৫ সাল হোক ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির, বিভেদ-ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, ভূমি বেদখল-খুন-ধর্ষণ সমস্ত অপরাধের অবসান ঘটুক” এই শ্লোগানে ক্ষতিগ্রস্ত বগাছড়িবাসীর সাথে একাত্মতা প্রকাশের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা রিপন চাকমা, ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের প্রতিনিধি গতি চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জ্যেতিলাল চাকমা ও সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা। একই সময় সাজেকের মাজলং ও কিয়াংঘাটেও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।