খাগড়াছড়িতে পুলিশী বাধার মুখে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সমাবেশ

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ।। খাগড়াছড়িতে পুলিশী বাধার মুখে পাহাড় ও সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের আন্দোলনের জোট ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’।

আজ ১৫ নভেম্বর ২০২০, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্ত্বরের মুক্তমঞ্চে সমাবেশের আয়োজন করা হলেও পুলিশের বাধার কারণে যথাসময়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।

পুলিশ সমাবেশে বাধা দিচ্ছে।

জেলা প্রশাসন থেকে ১৪টি শর্ত জুড়ে দিয়ে সমাবেশের অনুমতি প্রদান করা হলেও সমাবেশের প্রাক্কালে পুলিশ সমাবেশ স্থলে এসে বাধা প্রদান করে। তারা সমাবেশ ভন্ডুল করে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।

অপরদিকে, সমাবেশে যোগদান করতে আসার পথে শত শত লোকজনকে জেলা সদরের স্বনির্ভরে পুলিশ আটকিয়ে দেয়। এছাড়া পেরাছড়া এলাকায়ও বাধা দেওয়া হয়। এ সময় জনতা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে পুলিশী বাধার প্রতিবাদ জানান। ফলে স্বনির্ভরসহ খাগড়াছড়ি শহর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে।

পরে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নেতৃবৃন্দ রাস্তার মধ্যেই সমাবেশ করেন।

স্বনির্ভরে পুলিশের বাধা

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানার সঞ্চালনায় ও বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক  নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি শোভা চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, যুগেশ ত্রিপুরা, কবির হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফরাদ জামান জনি, বাংলাদেশ মারমা স্টুডন্টে কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিঅং মারমা, উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্ক এর সংগঠক নমিতা চাকমা, বলপেইয়া আদামের (গ্রামের) ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারীর মা ফুলরাণী চাকমা প্রমুখ।

এছাড়া সমাবেশে উপস্থিতি থেকে সংহতি জানিয়েছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষেদের চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য জেসি চাকমা, সংবাদ কমী চিংমে প্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আবু দাউদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন।

সমাবেশে বলপেইয়া আদামের ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারীর মা ফুলরাণী চাকমা সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে এই ঘটনার সুষ্ঠূ বিচার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশ করার জন্য অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা প্রদান করেছে। ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ির জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণের কারণে প্রশাসনের বাধার মধ্যেও সমাবেশ করতে পারছি। সমাবেশে বাধা প্রদানের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে পুলিশ-প্রশাসনই ধর্ষকদের রক্ষা করে চলেছে।

বক্তারা পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী-শিশুরা। কিন্তু সঠিক বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। সমতলে নারী ধর্ষণের ঘটনায় কিছু দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা হলেও এখানে (পাহাড়ে) সামরিক-বেসামরিকভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রাখার ফলে এখানকার ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক কোন বিচার হতে দেখা যায় না।

বক্তারা বান্দরবানের চিম্বুক পহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিলাসবহুল পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের নামে সেখানকার আদি বাসিন্দা ম্রো জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

সমাবেশ থেকে পাহাড় ও সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে ও ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। এছাড়া সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট-এ গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে পাহাড়ি জাতিসত্তাদের নিজ জায়গা থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান বক্তারা। একই সাথে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

অপরদিকে, সমাবেশে যোগদান করতে আসার পথে জেলা সদরের স্বনির্ভরে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন শত শত লোকজন। পরে তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করেন। এই সমাবশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা অহ্বায়ক এন্টি চাকমা।

তারা পুলিশী বাধার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পুলিশ ধর্ষণকারীদের রক্ষা করতে চায় বলেই আজকের সমাবেশে বাধা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের এ ধরনের অন্যায়-অবিচারের কারণেই ধর্ষণকারীরা গ্রেফতার হয় না, তাদের বিচার হয় না। বলপেইয়া আদামে প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণে জড়িত দুই ধর্ষককে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার না হওয়া এবং ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কারণে পাহাড়ে নিয়মিত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে পাহাড় ও সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে গত ৯ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মহাসমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি উত্থাপন এবং ঢাকা টু নোয়াখালী লংমার্চসহ বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ এর নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে উক্ত ৯ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় তারা সমাবেশ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে খাগড়াছড়িতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আর এই সমাবেশের জন্য কয়েকদিন আগেই তারা জেলা প্রশাসনকে অবগত করেছিলেন।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More