খাগড়াছড়ির সাহসী ও প্রতিবাদী নারী চঞ্চলা চাকমা

0
বিশেষ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

গত ৩০ জুন তিন দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ডাকা সড়ক অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ির দগিন খবংপুজ্জে গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চলা চাকমা(কান্দারা মা) নিজ গ্রামে পুলিশের গুলিতে আহত হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে নিয়েই আমাদের এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন।

পুলিশের গুলিতে আহত চঞ্চলা চাকমা

খাগড়াছড়ির সাহসী ও প্রতিবাদী এক নারীর নাম চঞ্চলা চাকমা। ‘কান্দারা মা’ নামেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত। দগিন খবংপুজ্জে গ্রামের বাসিন্দা বক্র চাকমার স্ত্রী তিনি। অনেকটা দিন মজুরী করেই চলে তাদের সংসার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বামী জীবিত থাকলেও পরিবার ভরণ পোষণের দায়িত্ব মূলত তারই। এই অভাব-অনটনের মাঝেও বার বার তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। তার এই সাহসিকতার মাঝেই রয়েছে সমাজ ও জাতির জন্য অগাধ ভালোবাসা।

চঞ্চলা চাকমা গত ৩০ জুন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ডাকা অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ির দগিন খবংপুজ্জে গ্রামে পুলিশের গুলিতে আহত হন। এদিন পুলিশ পিকেটারদের ধাওয়া করতে করতে খবংপুজ্জে গ্রামে ঢুকে পড়লে তিনি সহ আরো দুই জন নারী গ্রামের ভিতর না ঢুকার জন্য পুলিশের সাথে কথাবার্তা বলতে যান। এ সময় হঠাৎ পুলিশ তাদের উপর বেপরোয়াভাবে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও তাজা গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলি এসে তার পেটে লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। তার তল পেটে ৬টি গুলি বিদ্ধ হয়। এরপরও তিনি ভেঙে পড়েননি, সাহস হারাননি, দিশেহারা হয়ে পড়েন নি। তার চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রুও পড়তে দেখা যায়নি। তিনি নির্ভিক চিত্তে তার পেটের ক্ষতগুলো অন্যদের দেখিয়েছেন। সাহসী না হলে এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। পাহাড়িদের সমাজে এ ধরনের সাহসী ও প্রতিবাদী নারীর সংখ্যা খুবই কম রয়েছে।
চঞ্চলা চাকমার সাহসিকতার ভূমিকা শুধু এটা নয়। এর আগেও গত বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের ১০ জুন খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের শান্তিপূর্ণ ভূমি কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধা দেয়ার প্রতিবাদে ২১ ঘন্টা সড়ক অবরোধ চলাকালে র‌্যাব ও পুলিশকে প্রতিরোধ করতে সাহসি ভূমিকা পালন করেন তিনি। এদিনও একইভাবে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা দক্ষিণ খবংপুজ্জে গ্রামে ঢুকে সাধারণ লোকজনের উপর নিপীড়ন নির্যাতন ও নারীদের সাথে  অশোভন আচরণ করলে তার নেতৃত্বে নারীরা সংগঠিত হয়ে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাদের প্রতিরোধের মুখে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।এছাড়া আরো জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীর সৃষ্ট মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি হলে চঞ্চলা চাকমাও এই প্রতিরোধে যোগ দিয়ে লাঠি মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ব্যাপক গণপ্রতিরোধের ফলে সে সময় সেনাবাহিনী ও শাসকচক্র মুখোশ বাহিনী ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিল।

মোট কথা, চঞ্চলা চাকমা একজন সাহসী ও প্রতিবাদী নারীর প্রতীক। তার এই সাহসিকতা ও চেতনাবোধ পাহাড়ি নারীদের মাঝে হয়ে উঠুক চেতনার অগ্নি মশাল। এই মশাল প্রজ্জ্বলিত করে সামনের সব আঁধার ঘুছিয়ে আলোর পথের সন্ধানে এগিয়ে যাক পাহাড়ি নারীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক নারী জাগরণের ঢেউ। গড়ে উঠুক নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম-এটাই সবার প্রত্যাশ।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More