ইউপিডিএফ নেতা প্রতিম চাকমাসহ আটক ৫জনকে মুক্তির দাবিতে

খাগড়াছড়িতে আটককৃতদের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Press conference khagrahcari2, 25.11.2015খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে অন্যায়ভাবে আটক ইউপিডিএফ নেতা প্রতিম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা জিকো ত্রিপুরা, পিসিপি নেতা নিকাশ চাকমা, স্বনির্ভর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গণপাঠাগার হুয়াং বোই-ও বা’র ক্রীড়া সম্পাদক স্বপন চাকমা এবং গণপাঠাগারের অর্থ সম্পাদক রঞ্জু চাকমা খোকনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আটককৃতদের পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ির শহরের মাহজন পাড়ার টং রেস্টুরেন্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জিকো ত্রিপুরার সহধর্মিনী অঞ্জলি ত্রিপুরা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রতিম চাকমার স্ত্রী অমিতা চাকমা, নিকাশ চাকমার বাবা দিপন চাকমা ও মা হিরন বালা চাকমা, স্বপন চাকমার স্ত্রী সুমিতা চাকমা এবং খোকন চাকমার মা  স্নেহবালা চাকমা।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে টং রেস্টুরেন্টের বাইরে ২ গাড়ি আর্মি ও ১ গাড়ি পুলিশ অবস্থান নেয়। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, গত ১৯ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার সময় খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুয্যার দশবল বৌদ্ধ বিহারের পাশের এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে প্রতিম চাকমা, জিকো ত্রিপুরা, স্বপন চাকমা ও নিকাশ চাকমাকে আটক করেছে। এর মধ্যে নিকাশ চাকমা খাগাড়ছড়ি সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র এবং স্বপন চাকমা একজন ব্যবসায়ী। আটকের সময় প্রতিম চাকমা ও জিকো ত্রিপুরা দোকানে নাস্তা এবং সওদা করছিলেন। একই সময় নিকাশ চাকমাকে তার ভাড়া বাসা থেকে আটক করা হয়। অন্যদিকে এ আটকের ঘটনার ঘন্টা দেড়েক পর নারাঙহিয়ার অনন্ত মাষ্টার পাড়ার সরকারি কোয়ার্টার থেকে রঞ্জু চাকমা খোকনকে মটর সাইকেলসহ তুলে নিয়ে একই স্থান থেকে আটক দেখানো হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এফআইআর-এ তাদের কাছে অস্ত্র ও গুলি পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের কাছে কোন অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও সত্য নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আটককৃতদের সাথে ৪টি মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়া হলেও এফআইআর-এর জব্দ তালিকায় একটিরও উল্লেখ করা হয়নি এবং এগুলো ফিরিয়েও দেয়া হয়নি। যা ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনারই সমতুল্য।

আটককৃতদের শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেদিন তাদেরকে চোখ বেঁধে দেয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এছাড়া দোকানের মালিক এবং চাকুরীজীবি মানিকধন চাকমা ও “লাইট হাউজের” কেয়ারটেকার কনকন চাকমা ওরফে জাল্যাকেও মারধর করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মানিকধন চাকমার ভাড়া দেয়া বাসার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তল্লাশী চালায়।

আটককৃতদের নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও অন্যায়ভাবে তাদেরকে এভাবে আটক করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তারা নির্দোষ, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই এবং তারা কোন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন না। নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের কর্মকান্ডে আমরা হতবাক। হতবাক এবং আতংকিত এলাকার মানুষও।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আটককৃত উক্ত ৫ জনকে অবিলম্বে এবং বিনাশর্তে মুক্তি, তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ন্যায় বিচারের দাবি জানানো হয়।
————–

* নীচে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

আটককৃতদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন
অন্যায়ভাবে আটক ইউপিডিএফ নেতা প্রতিম চাকমা গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা জিকো ত্রিপুরা, পিসিপি নেতা নিকাশ চাকমা, স্বনির্ভর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গণপাঠাগার হুয়াং বোই-ও বা’র ক্রীড়া সম্পাদক স্বপন চাকমা এবং গণপাঠাগারের অর্থ সম্পাদক রঞ্জু চাকমা খোকনের মুক্তির দাবিতে
আটককৃতদের পরিবারের সদস্যদের
সংবাদ সম্মেলন
২৫ নভেম্বর ২০১৫, টং রেস্টুরেন্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টার, খাগড়াছড়ি

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা আমাদের শুভেচ্ছা, সালাম ও নমস্কার গ্রহণ করুন। আমরা সত্য ঘটনা তুলে ধরতে এবং সরকারের কাছে অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

আপনারা জানেন, গত ১৯ নভেম্বর ২০১৫ রোজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:৩০টায় খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুজ্যার দশবল বৌদ্ধ বিহারের পাশের এলাকা থেকে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক প্রতিম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিকাশ চাকমা, স্বনির্ভর বাজারের ব্যবসায়ী ও গণপাঠাগার হুয়াং বোই-ও বা’র ক্রীড়া সম্পাদক স্বপন চাকমা এবং পূর্ব নারাঙহিয়ার অনন্ত মাষ্টার পাড়ার একটি সরকারী বাসা থেকে গণপাঠাগার হুয়াং বোইওবা’র অর্থ সম্পাদক রঞ্জু চাকমা খোকনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেল-হাজতে অন্তরীণ রাখা হয়েছে।

উত্তর খবংপুজ্যায় আটকের সময় যা ঘটেছে
ঘটনার পর আমরা আটককৃতদের সাথে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে যা জানতে পেরেছি তা হলো এই Ñ

গত ১৯ নভেম্বর দুপুর সাড়ে বারটার দিকে একটা গাড়িতে করে ৪ জন সাদা পোষাকধারী ও একজন সেনাবাহিনীর ইউনিফরম পরিহিত ব্যক্তি উত্তর খবংপুজ্যাস্থ দশবল বৌদ্ধ বিহারের পাশের মানিকধন চাকমার দোকানে আসেন। এরপর তারা উক্ত দোকান থেকে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রতিম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্বনির্ভরস্থ মেসার্স চাবগী ডেকোরেটরস-এর স্বত্তাধিকারী ও গণপাঠাগার হুয়াং বোই-ও বা’র ক্রীড়া সম্পাদক স্বপন চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিকাশ চাকমা (অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী)কে মানিক ধন চাকমার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে স্বপন চাকমা দোকানের পাশে “লাইট হাউজ” নামের এক বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য ডেকোরেশনের কাজে সেখানে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে আটককৃত বাকিরা দোকানে কেনাকাটা করছিলেন অথবা নাস্তা খাচ্ছিলেন।

আটকের পর তাদেরকে চোখ বেঁধে দেয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এছাড়া দোকানের মালিক এবং চাকুরীজীবি মানিকধন চাকমা ও “লাইট হাউজের” কেয়ারটেকার কনকন চাকমা ওরফে জাল্যাকেও মারধর করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মানিকধন চাকমার ভাড়া দেয়া বাসার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তল্লাশী চালায়। সেখানে তারা অবৈধ কোন কিছু উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনানুযায়ী আটককৃতদের কারোর কাছ থেকে কোন ধরনের অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়নি। আটককারী নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও কোন অস্ত্র ও গুলি দেখায়নি। অপরদিকে তারা প্রত্যক্ষদর্শী ও দোকানের মালিক মানিকধন চাকমা, তার স্ত্রী রওশোনা চাকমা ও প্রতিবেশী কালাচান চাকমাকে একটা সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন।

উক্ত তিন ব্যক্তি যখন প্রথমে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করে প্রশ্ন করেন “কেন সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে হবে”, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, “সাক্ষী হিসেবে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করতে হবে।” কিন্তু তারা উক্ত কাগজে জব্দ তালিকা তৈরি করেনি এবং আটককৃতদের কাছ থেকে কি কি পাওয়া গেছে তাও কাউকে জানায়নি, জোর করে উক্ত তিন জনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে দেখা গেল ঐ কাগজে তারা মিথ্যাভাবে অনেক কিছু ইচ্ছামত লিখে জব্দ তালিকা বানিয়েছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি মোটর সাইকেল নিয়ে গেলেও জব্দ তালিকায় দেখায়নি এবং সেগুলি ফেরতও দেয়নি।

রঞ্জু চাকমা খোকনের গ্রেফতার প্রসঙ্গ
আটককৃতদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, রঞ্জু চাকমা খোকনকেও উত্তর খবংপুজ্যা থেকে অন্য চার জনের সাথে একই স্থান থেকে আটক করা হয়। কিন্তু এই বক্তব্যে সত্যের লেশ মাত্র নেই। খোকনকে পূর্ব নারাঙহিয়ার অনন্ত মাষ্টার পাড়ায় তার বাবা রাঙাচান চাকমার (তিনি খাগড়াছড়ি জেলার সরকারের হর্টিকালচার বিভাগের কর্মচারী) সরকারী বাসা থেকে উত্তর খবংপুজ্যার ঘটনার (আটক) পর গ্রেফতার করা হয়।

দুপুর দেড়টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় খোকন বাড়িতে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। আর্মিরা বাড়ির চারদিকে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ছিল, তবে তাদের সাথে থাকা সিভিল পোষাক পরিহিত এক ভদ্রলোক বাড়িতে ঢুকে খোকনের মোটর সাইকেলের দিকে ইঙ্গিত করে তার মাকে জিজ্ঞেস করেন, “গাড়িটি কার?” খোকনের মা ¯েœহ বালা চাকমা গাড়িটি তার ছেলের বলে উত্তর দিলে ঐ ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করেন, গাড়িটির কাগজ পত্র, লাইসেন্স ও হেলমেট আছে কিনা। এসব তাকে দেখানো হলে তিনি খোকনকে তাদের সাথে যেতে বলেন। খোকনের মা তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে জানতে চাইলে উক্ত ভদ্রলোক বলেন, খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর খোকনকে দুপুর ২টার দিকে তার মোটর সাইকেলসহ নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ দিন তাকে পুলিশে সোপর্দ করলেও এখানো তার মোটর সাইকেল ফেরত দেয়নি।

এফআইআর-এর সাথে বাস্তবতার অসঙ্গতি
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফ আই আর) যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে বাস্তবে যা ঘটেছে তার বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:

১। জিকো ত্রিপুরা ও স্বপন চাকমার কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও কার্টুজ পাওয়া গেছে বলে এফ আই আর-এ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়, দাহা মিথ্যা এবং সাজানো, যা উপরে ঘটনার বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।

২। প্রতিম চাকমা, রঞ্জু চাকমা খোকন এবং নিকাশ চাকমা’র নিকটও কার্তুজ পাওয়া গেছে বলে এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়। বাস্তবে তাও সত্য নয়, দাহা মিথ্যা এবং সাজানো, যা উপরে ঘটনার বর্ণনার থেকে সুস্পষ্ট।

৩। এফ আই আর-এ বলা হয় আটককৃতরা রাস্তায় চাঁদা আদায় করেছিলেন। কিন্তু এ অভিযোগ আদৌ সত্য নয়। কেউ তাদের বিরুদ্ধে থানায় জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করছে বলে কোন অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরাও চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ করেননি। কার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি হচ্ছিল তাও এফ আই আর-এ উল্লেখ নেই। সুতরাং চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরোপুরি ভূয়া ও মিথ্যা; আটককৃতদেরকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য মিথ্যাভাবে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

৪। আটককৃতরা দৌড়ে পালানোর সময় ড্রেনে পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে এফ আই আর-এ দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আশেপাশে কোথাও ড্রেন বা নালা-নর্দমা নেই। তা ছাড়া গেফতারকৃতরা কেউ পালিয়ে যান নি। দু একজন সওদা নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন।

প্রকৃত সত্য হলো, আটককৃতরা ড্রেনে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হননি, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হলে তারা জখম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

৫। ঘটনা ঘটেছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, অথচ এফ আর আই-এ উল্লেখ করা হয়েছে ১৩:৫৫টায়।

৬। রঞ্জু চাকমা খোকনকে নারাঙহিয়ার অনন্ত মাষ্টার পাড়াস্থ তার বাবার সরকারী বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অথচ এফ আই আর-এ দেখানো হয়েছে তাকেও উত্তর খবংপুজ্যা থেকে বাকি চারজনের সাথে একই সময়ে আটক করা হয়েছে।

৭। খোকনের মোটর সাইকেলসহ মোট ৪টি মোটর সাইকেলও আটককৃতদের সাথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ এগুলোর কোনটি জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি, ফিরিয়েও দেয়া হয়নি।

৮। খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক হিসেবে প্রতিম চাকমার নিকট হাজার হাজার বা লক্ষ টাকা থাকা স্বাভাবিক। গণপাঠাগারের অর্থ সম্পাদক হিসেবে রঞ্জু চাকমা খোকনের নিকট হাজার টাকা আর ছাত্র নেতা হিসেবে নিকাশ চাকমার নিকটও হাজার টাকা থাকা স্বাভাবিক। টাকা থাকলেই কি চাঁদাবাজির মামলা দিতে হবে?? অথচ ডেকোরেশনের মালিক ও ব্যবসায়ী স্বপন চাকমার নিকট হাজার হাজার টাকা পাওয়ার পরও জব্দ তালিকায় তা উল্লেখ করা হয়নি।

রাজনীতি করা কি অপরাধ?
আটককৃতদের দু’জন রাজনৈতিক দলের সদস্য, একজন ছাত্র নেতা, একজন ব্যবসায়ী ও একটি প্রগতিশীল পাঠাগারের সংগঠক এবং একই ভাবে অন্যজনও একই প্রগতিশীল পাঠাগারের সংগঠক। আমাদের প্রশ্ন হলো, রাজনীতি করা কি অপরাধ? ব্যবসা করা কি অন্যায়? নাকি পাঠাগারের সংগঠক হওয়া নিষিদ্ধ কাজ? আমরা জানতে চাই কেন তাদেরকে অন্যায়ভাবে ও বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এরপর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা আরো জানতে চাই, কেন ছাত্র নেতা এবং খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের ছাত্র (যার পরীক্ষা চলছে) নিকাশ চাকমার শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা মনে করি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও অন্যায়ভাবে তাদেরকে এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তারা নির্দোষ, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই এবং তারা কোন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন না। নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের কর্মকান্ডে আমরা হতবাক। হতবাক এবং আতংকিত এলাকার মানুষও।

আমাদের দাবি
আমরা ন্যায় বিচার চাই, অন্যায়ের প্রতিকার চাই, আটককৃতদের যে মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে তা ফেরত চাই। তাই আমাদের দাবি অবিলম্বে এবং বিনাশর্তে আটককৃত উক্ত পাঁচজনকে মুক্তি দেয়া হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।

সবাইকে ধন্যবাদ।

১। অমিতা চাকমা (প্রতিম চাকমার স্ত্রী)

২। অঞ্জলি ত্রিপুরা (জিকো ত্রিপুরার স্ত্রী)

৩। হীরন বালা চাকমা (নিকাশ চাকমার মা)

৪। দীপন চাকমা (নিকাশ চাকমার বাবা)

৫। স্নেহবালা চাকমা (রঞ্জু চাকমা খোকনের মা)

৬। সুমিতা চাকমা (স্বপন চাকমার স্ত্রী)
—————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More