খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের সমাবেশে পুলিশের বাধা
সিএইচটি নিউজ ডটকম
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন (গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে অনুমতি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ বাধা দিয়েছে। অপরদিকে, মানিকছড়িতে সমাবেশে সেটলার বাঙালিরা হামলা চালিয়েছে বলে সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে। এতে তিন জন পাহাড়ি আহত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ মেনে চল, মানবাধিকার লংঘন বন্ধ কর এই শ্লোগানে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণবিরোধী ’১১ নির্দেশনা তুলে নেয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদরের নারানখিয়া রেড স্কোয়ারে সকাল ১০টায় সমাবেশ চলাকালে জনৈক ম্যাজিষ্ট্রেট এসে সমাবেশে করার অনুমতি নেই বলে জানান এবং সমাবেশ শেষ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। ফলে নেতৃবৃন্দ সমাবেশ শেষ করতে বাধ্য হন। এ সময় সমাবেশ স্থল ঘিরে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সমাবেশ স্থলের বাইরে বিজিবি’র সদস্যও মোতায়েন ছিল।
সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর সদস্য ডেইজি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, ভূমি বেদখল, অন্যায় ধরপাকড়সহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতনের সাথে জড়িত সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবার আন্তর্জাতিক মিশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষার কাজ করছে!
তিনি বলেন, দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবার এবং নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে সেটলার বাঙালিদের হামলার শিকার হওয়া পাহাড়ি পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও সরকার তাদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসন করছে না।
তিনি মিছিল-মিটিং সমাবেশে বাধা প্রদান ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ মেনে চলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি হিল উইমেন্স ফেডারেশন সভাপতি নিরূপা চাকমা, সদস্য দ্বিতীয়া চাকমা সহ আটক পিসিপি-যুব ফোরাম-ইউপিডিএফ’র নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা সমাবেশে সঞ্চালনা করেন। তিনি মানবাধিকার দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিন সংগঠনের বিবৃতি:
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি রতন স্মৃতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক পলাশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিনাকী চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে খাগড়াছড়িতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাদান ও মানিকছড়িতে সেটলার হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন ১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। এই দিবসকে সামনে রেখে পাহাড়ের তিন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি জেলার রেডস্কোয়ারসহ বিভিন্ন উপজেলায় সমাবেশ করার জন্য সকল ধরনের সহযোগীতা কামনা করে জেলা প্রশাসনকে অবগতি দেওয়া হয়। সার্বজনীন মানবাধিকার সনদে ২০ নং ধারায় প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হবার অধিকারের কথা বলা হলেও প্রশাসন শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা প্রদান করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত গণবিরোধী ‘১১দফা নির্দেশনা’ প্রত্যাহার, ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসের’ সমাবেশ থেকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা, সংগঠনের জেলা দপ্তর সম্পাদিকা দ্বিতীয়া চাকমাসহ বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, বেপরোয়া ধরপাকড় ও রাত-বিরাতে হুমকিমূলক টহল বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, ভূমি বেদখল ও পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং মানিকছড়ি সুদুরখীলে সমাবেশে হামলাকারী সেটলারদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।