মিঠুন চাকমা হত্যা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র সংবাদ সম্মেলন: বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা

0

খাগড়াছড়ি : মিঠুন চাকমা হত্যা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি ২০১৮) খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

সংবাদ সম্মেলন থেকে  মিঠুন চাকমাসহ  ইউপিডিএফ’র নেতা-কর্মী খুনীদের গ্রেফতার-শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অন্যায় ধরকাপড়-হয়রানি, পাড়া-গ্রামে অহেতুক তল্লাশি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন তথা অব্যাহত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে  আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত  বিক্ষোভ, স্মরণসভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সংহতি সমাবেশসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা।

লিখিত বক্তব্যে নতুন কুমার চাকমা বলেন, ‘আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, প্রশাসনের নাকের ডগায় সেনা-পুলিশের বলয়ভুক্ত এলাকায় এই নব্য মুখোশবাহিনী কিভাবে মিঠুনের মত এক পরিচিত রাজনৈতিক কর্মীকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যার দুঃসাহস দেখাতে পারে। হত্যার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন খুনীদের গ্রেফতার করতে পারেনি, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকী মামলা নিতেও পুলিশ গড়িমসি করছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি প্রশাসনই খুনীদের প্রশ্রয়দাতা? প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকা- সংঘটিত হওয়া এবং খুনীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনমনে আস্থাহীনতা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস বড্ডমূল হয়েছে।’

নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া নব্য মুখোশবাহিনী দুর্বৃত্তরা কখনই অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৫ নভেম্বর ২০১৭ খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সেনা পুলিশের কঠোর প্রহরায় তথাকথিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি আত্মপ্রকাশ করে এবং তার  পরে পরেই একের পর এক অপকর্ম সংঘটিত  করে চলেছে। গত ৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ যথাক্রমে নান্যাচর বেতছড়িতে সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা ও বন্দুকভাঙ্গায় ইউপিডিএফ সংগঠক অনিল বিকাশ চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। ৩ জানুয়ারি মিঠুন তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে বিএনপি সরকারের কর্ণেল অলি আহম্মেদের প্রত্যক্ষ মদদে মুখোশবাহিনীর সাথে এ ‘নব্য মুুখোশবাহিনী’র হুবহু মিল রয়েছে।’               

লিখিত বক্তব্যে তিনি মিঠুন চাকমাকে একজন পরিচিত ও জনপ্রিয় নেতা উল্লেখ করে বলেন, ‘তার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর দেশে বিদেশে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ৫ জানুয়ারি মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান ও স্বনির্ভরে মিঠুন চাকমার স্মরণে সংহতি সমাবেশ ছিল। পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা থাকার কারণে তার দাহক্রিয়া ও সংহতি সমাবেশে যোগদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোকজন আসতে থাকে। কিন্তু পথে পথে বিভিন্ন সেনা চেকপোস্টে গাড়ি আটকিয়ে হুমকি দিয়ে লোকজনকে ফেরত পাঠানো হয়। ফলে হাজার হাজার মানুষ দাহক্রিয়া ও সংহতি সমাবেশে যোগদান করতে পারেনি।

ওই দিন সেনাপ্রশাসন খাগড়াছড়ি সদরে যুদ্ধংদেহী ভূমিকায় ছিল। সারাদিন টহল, তল্লাশি ছিল। দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানের আগে খাগড়াছড়ি স্বনির্ভরস্থ আমাদের কার্যালয়ে তার মরদেহ এনে শ্রদ্ধা জানানোর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু প্রশাসন কোন কারণ ছাড়া তাঁর মরদেহ ইউপিডিএফ কার্যালয়ে আনতে দেয়নি। এমনকী স¦নির্ভরে সমাগত লোকজনকেও দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেয়নি। দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান ও সংহতি সমাবেশের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও প্রশাসনের বাধাদান এবং সেনাপ্রশাসনের রণমূর্তি ধারণ করা সভ্য সমাজে অকল্পনীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে শহীদ মিঠুনসহ ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী খুনীদের গ্রেফতার-শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অন্যায় ধরকাপড়-হয়রানি, পাড়া-গ্রামে অহেতুক তল্লাশি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন তথা অব্যাহত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিন পার্বত্য জেলায় বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৯ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলার ৮ টি উপজেলা সদরে বিক্ষোভ; ১১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বিক্ষোভ; ১৪ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি সদরে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন; ১৭ জানুয়ারি রাংগামাটি ও বান্দরবানে সংহতি সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন; ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন; ২৮ জানুয়ারি পিসিপি’র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক সার্কুলার প্রত্যাহারসহ ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস-পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, ভূমি বেদখল, অপসংস্কৃতির বিস্তার ও সাম্প্রদায়িকতা রোধে আগামী ৪-৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More