খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সংবাদ সম্মেলন : কর্মসূচি ঘোষণা

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

PCP press conferenceপিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদআজ ১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১ টায় খাগড়াছড়ি প্রেস কাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা৷ এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক চন্দ্রদেব চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য সুব্রত ত্রিপুরা, উমেশ চাকমা ও জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা

লিখিত বক্তব্যে ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, বাংলাদেশের দণি পূর্বকোণে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাস করে আসছে৷ তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয়, বৃটিশ শাসনামল থেকে অদ্যাবধি তাদের ওপর একদিকে যেমন রাজনৈতিক দমন পীড়ন চলে আসছে, তেমনি অন্যদিকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করে দেওয়ার পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে ধ্বংসের চক্রান্ত চলছেনিজ বাসভূমিতেই পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহ এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে চলেছে৷ সংবিধানে জাতিসত্তার কোন স্বীকৃতি নেইসরকারী নথিপত্রে এমনকি ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতেও তাদেরকে উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা কোন আত্ম্নমর্যাদা সম্পন্ন জাতি বা জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত অপমানজনক

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক ও বহুভাষিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ছাড়া অন্যান্য ভাষাগুলো অনাদরে, অবহেলায় ও অবজ্ঞায় পড়ে রয়েছে৷ বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের এই ভাষাসমূহের সংরণ, বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য কোন সরকার আজ পর্যন্ত কোন ধরনের পদপে গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই৷ বরং বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের সংস্কৃতিকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে

তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত বিশেষত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের বক্তব্য অষ্পষ্ট রেখে, অতিরঞ্জিত বক্তব্য ছাপিয়ে এবং ছবিতে বাঙালী আধিপত্যের বিষয়কে সামনে এনে পাহাড়িসহ সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে হেয় করা হয়েছে এবং আদিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের শতশত বছরের ঐতিহ্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছেজাতিসত্তাসমূহকে বলা হয়েছে বহিরাগত আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানতে চাই বাংলাদেশে বাংলা ভাষাভাষী ছাড়াও ভিন্ন ভাষাভাষী বিভিন্ন জাতিসত্তার বাস, তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের মৌলিক অধিকার রয়েছে

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ২০০২ সালে তত্‍কালীন উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ানের বরাবরে ১১ সেপ্টেম্বর স্মারকলিপি প্রদান করা হয় ২০০২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসকে সামনে রেখে তত্‍কালীন শিক্ষা মন্ত্রী এসএম ওসমান ফারুকের বরাবরে ১৬ সেপ্টেম্বর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়২০০৩ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি তত্‍কালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়৷ তত্‍কালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দপ্তর থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি০৩ পিসিপির তত্‍কালীন সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমার বরাবরে ৫দফা দাবির যুক্তিকতা স্বীকার করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাসমূলক চিঠি প্রেরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি

সংবাদ সম্মেলন থেকে মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তিন পার্বত্য জেলায় স্কুল-কলেজে কাশ বর্জন, নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা থেকে বিরত থাকা এবং ১২ ফেব্রুয়ারি প্রত্যেক থানা এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি২০১১ তিন পার্বত্য জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, সহ সভাপতি ক্যহাচিং মারমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা

উল্লেখ্য যে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উত্থাপিত দাবিগুলো হচ্ছে :১.পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা ২.জাতিসত্ত্বার প্রতি অবমাননাকর যেকোন বক্তব্য পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া,৩.পাহাড়ি জাতিসত্তার সঠিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা ৪.বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংপ্তি সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা ও ৫.পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করা

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More