খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র বিক্ষোভ : সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবি

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
PCP protest khagrachari, 17.09.2015খাগড়াছড়ি: আজ ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের নারাঙহিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা মাঠে গিয়ে সমাবেশ করে। এতে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা চালায়।

একই সময় ‘শিক্ষা বাণিজ্যকরণ বন্ধ কর’ এই শ্লোগানে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা বাস্তবায়ন ও জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে পিসিপি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ শাখার উদ্যোগে সরকারী কলেজ মাঠ থেকে মিছিল বের করলে কলেজ গেইটের সামনে সেনা ও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে তারা সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে পিসিপি সরকারি কলেজ শাখার অর্থ সম্পাদক নিকাশ চাকমা ও সাধরণ ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে রনেল চাকমা বক্তব্য রাখেন।

বক্তরা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ২০০০ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক দাবিতে সংগ্রাম করে আসছে। এরই ধারাবাহিক হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শিক্ষামন্ত্রী ড: ওসমান ফারুক বরাবরে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। পিসিপি’র দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ৬টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর ঘোষণা দিলেও আজও তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি।khagrachari college,17.09.2015

বক্তারা আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন করছে। যার মাধ্যমে সরকার পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে সরকার মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতি করে পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গণবিরোধী ১১ নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। সেনা-পলিশ দিয়ে সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের ওপর বাধা প্রদান করছে। আজও তারা বাধা দিয়ে মিছিল-সমাবেশ ভ-ুল করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।

বক্তরা অবিলম্বে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা বাস্তবায়ন, পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণবিরোধী ১১ নির্দেশনা বাতিল, অন্যায় ধরপাকড়, নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করা এবং মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ তুলে নিয়ে পূর্ণগণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শরীফ শিক্ষা কমিশনের জনবিরোধী শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজ সারাদেশে একযোগে হরতাল আহ্বান করে। এদিন পাকিস্তান সরকারের লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী ও পুলিশ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এতে অনেকে হতাহত হয়। গ্রেফতার করা হয় শতশত ছাত্রকে। এরপরও ছাত্র সমাজ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে এ ঘটনার তিন দিনের মধ্যে সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে শরিফ শিক্ষা কমিশন স্থগিত করতে বাধ্য হয়। সেই থেকে ছাত্র সমাজ ১৭ সেপ্টেম্বরকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
—————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More