মিঠুন চাকমার মুক্তির দাবিতে পোস্টরিংকালে

খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র ৫ নেতা-কর্মীর উপর সেটলারদের হামলা-মারধর, সেনা হেফাজতেও ব্যাপক নির্যাতন

0

Khagrachari

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিং করার সময় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে গতকাল বুধবার (২০ জুলাই) রাত ১০টার দিকে তথাকথিত বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামধারী উগ্রসাম্প্রদায়িক সেটলার বাঙালিরা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর ৫ নেতা-কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে লোহার রড, লাঠিসোটা দিয়ে বেদম মারধর করেছে। এরপর তারা পিসিপি নেতা-কর্মীদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। সেনারা তাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে রাতভর ব্যাপক শারিরীক নির্যাতন চালায়। এতে ৫ জনই গুরুতর আহত হন। তাদের সম্পূর্ণ শরীর আঘাতপাপ্ত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে খাগড়াছড়ি সদর থানায় হস্তান্তরের পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়পূর্বক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

হামলা ও নির্যাতনের শিকার পিসিপি’র নেতা কর্মীরা হলেন- খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের বিএ ১ম বর্ষের ছাত্র জেসীম চাকমা, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ শাখার সভাপতি ও একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র জুয়েল চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সজীব চাকমা, পানছড়ি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র এডিশন চাকমা ও খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে শাখার সাধারণ সম্পাদক ও একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র প্রতিপন চাকমা। এর মধ্যে জেসীম চাকমাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে চট্টগ্রামে রেফার করেন।

জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে জেসীম চাকমার নেতৃত্বে পিসিপি’র উক্ত নেতা-কর্মীরা ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমার মুক্তির দাবিতে ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিট কর্তৃক প্রকাশিত পোস্টার লাগাতে যায়। তারা মহাজন পাড়ায় পোস্টারিং শেষ করে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে পোস্টারিং করতে গেলে বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাবেক নেতা ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম রানার নেতৃত্বে বিশ্বজিৎ দাশ সহ বাঙালি ছাত্র পরিষদের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা মোবাইলে আরো লোক ডেকে এনে পিসিপি নেতা-কর্মীদের ঘেরাও করে লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালায় এবং তাদেরকে বেদম মারধর করে। এ সময় তারা জেসীম চাকমার এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মারধর করার পর সেটলাররা মোবাইলে সেনাবাহিনীকে ফোন করলে ব্যাপক সংখ্যক সেনা সদস্য উপস্থিত হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলে এবং পিসিপি নেতা-কর্মীদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর তাদের উপর উপর্যপুরি শারিরীক নির্যাতন চালানো হয়। তাদেরকে এমন বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তাদের সারা শরীর আঘাতে আঘাতে ভরে গেছে। তারা এখন ঠিকমত হাঁটাচলাও করতে পারছে না।

ভিকটিমরা জানিয়েছেন, নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনা সদস্যরা রাতভর পালাক্রমে তাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ার পরও তাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে খাগড়াছড়ি সদর থানায় হস্তান্তর করা হলে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়পূর্বক বিকালে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মোমিনুল ইসলাম মোবাইল কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনা করেন।
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More