খাগড়াছড়িতে পিসিপি-যুব ফোরামের তিন নেতার দাহক্রিয়া সম্পন্ন : লড়াইয়ের দৃপ্ত শপথ
খাগড়াছড়ি : পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবিচল থাকার দৃপ্ত শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভরে সংস্কারবাদী জেএসএস ও নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর নেতা তপন চাকমা, এল্টন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ) নেতা পলাশ চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান আজ রবিবার (১৯ আগস্ট) বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের দক্ষিণ খবংপয্যা শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় ইউপিডিএফ, পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ-এর নেতা-কর্মী-সমর্থক ছাড়াও এলাকার জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
আজ বেলা আড়াটার দিকে খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশ তিন নেতার মরদেহ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে পিসিপি, ডিওয়াইএফ-এর নেতা-কর্মীরা তাদের মরদেহ চেঙ্গী নদীর ওপারে দক্ষিণ খবংপয্যা শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর লাশের কফিন দলীয় পতাকায় ঢেকে তাদের সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
এরপর ইউপিডিএফ, তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী, পরিবারের লোকজন ও এলাকার জনগণ ফুল দিয়ে তিন নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংক্ষিপ্ত এক শোক সভার আয়োজন করা হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা ও পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বক্তব্য রাখেন।
তারা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কাপুরুষোচিত উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে হত্যাকারী সংস্কার-মুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।
শোক সভার পর ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। পরে পিসিপি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও ডিওয়াইএফ-এর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ চাকমার নেতৃত্বে তিন নেতার সম্মানে দেওয়া দলীয় পতাকা তাদের স্ব স্ব পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এরপর ইউপিডিএফ-এর পতাকা উঁচিয়ে ধরে তিন নেতার মরদেহ সামনে রেখে উপস্থিত তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মুষ্টিবদ্ধ হাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জাতিসত্তাসমূহের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা। পরে চিতায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে তিন নেতার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে একই ঘটনায় নিহত উত্তর খবংপয্যা গ্রামের বাসিন্দা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা ও একই গ্রামের রুপম চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এলাকাবাসীর অংশগ্রহনে দুপুরে উত্তর খবংপয্যা শ্মশানে সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া হামলায় নিহত প্রকোশলী ধীরাজ চাকমা ও সন কুমার চাকমাকে নিজ নিজ গ্রামের শ্মশানে দাহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে সংস্কারবাদী জেএসএস ও নব্য মুখোশ বাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী স্বনির্ভর বাজারে হানা দিয়ে অতর্কিতে কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই পিসিপি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহ সভাপতি পলাশ চাকমাসহ ৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অন্যরা হলেন- উত্তর খবংপয্যা গ্রামের বাসিন্দা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা(৫৩), একই গ্রামের যুবক রুপম চাকমা (২০) ও পানছড়ির উগলছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশরী ধীরাজ চাকমা। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
এদিকে এ ঘটনা শেষ হতে না হতে এর ঘন্টা তিনেক পর পেরাছড়া ও ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মিছিল নিয়ে স্বনির্ভরে আসার পথে পেরাছড়া ব্রিজের সামনে ফের হামলা চালায় সন্ত্রসাীরা। এতে গুরুতর আহত ৭০ বছরের বৃদ্ধ সন কুমার চাকমাকে হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি সেখানে মারা যান। এ হামলায় নারীসহ ৪ জন আহত হয়েছিলেন।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।