খাগড়াছড়িতে শহীদ ক্যজয় মারমার ২১তম শহীদ বার্ষিকী পালন করেছে পিসিপি
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে শহীদ ক্যজয় মারমার ২১তম শহীদ বার্ষিকী পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা। আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ ২০১৭) সকাল সাড়ে ৮টায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় ক্যজয় মারমার অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও শহীদ ক্যজয় মারমার পরিবারবর্গ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এই শহীদ বার্ষিকী পালন করা হয়।
অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র পক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন চাকমা ও শহীদ ক্যজয় মারমার পরিবারের পক্ষ থেকে তার পিতা চাথোয়াই মারমা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্প স্তবক অর্পণ শেষে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক জেসীম চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমার স্টুডেন্ট কাউন্সিল (বিএমএসসি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ক্যপ্রু মারমা প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ চাকমা। স্মরণ সভা শুরুতে শহীদ ক্যজয় মারমাসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনটি নিরবতা পালন করা হয়।
স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, শহীদ ক্যজয় মারমার আত্মবলিদান পার্বত্য চট্টগ্রাম ইতিহাসের এক চির স্মরণীয় দিন। ঘাতকরা নির্মমভাবে তার আত্মাকে হত্যা করেছে কিন্তু তার চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। তার চেতনার উজ্জীবিত হয়ে বর্তমানে হাজারো উত্তরসূরি জন্ম নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
তারা আরো বলেন, শহীদ ক্যজয় মারমা একজন প্রতিবাদী ও সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। সেদিন রাষ্ট্রীয় ঘাতক বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এবং যুক্তি তর্কে পরাজিত হাওয়ায় ঘাতকরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রাইফেলের বুলেট দিয়ে আঘাত করেছে এবং তিনি সে বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে আত্মবলিদান দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তাঁর সাহসী উচ্চারণ ছিল “স্বায়ত্তশাসনের জন্য রক্তের প্রয়োজন। আমি দিয়ে গেলাম। জয় আমাদের অনিবার্য।” তাঁর এই কথাটিই বর্তমান প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের জন্য পাথেয় হয়েই থাকবে।
বক্তারা, শহীদ ক্যজয় মারমার প্রতিবাদী চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ, জাতি ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রস্তুত হতে ছাত্র-যুব-নারী সামাজসহ প্রগতিশীল সকল সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও সর্বস্তরে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তারা শহীদ হীদ ক্যজয় মারমার হত্যাকারীদেরসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকার ও রাষ্ট্রীয় সামরিক-বেসামরিক বাহিনী এবং সেটলার কর্তৃক সকল ধরণের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার দাবি করেন।
১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চ খাগড়াছড়ির পানখিয়া পাড়া এলাকায় চাইথোয়াই প্রু মারমার মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধের প্রচারণা চালাতে গিয়ে এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যদের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হন ২০ বছরের টগবগে তরুণ ক্যজয় মারমা।
————————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।